রামায়ণের বীরযোদ্ধা ইন্দ্রজিৎ

রামায়ণে বর্ণিত মহাকাব্য হলো এক ইন্দ্রজিৎ বা মেঘনাদ পৌরাণিক যোদ্ধা। শাস্ত্র অনুযায়ী তিনি সমগ্র দানব, মানব, অন্যান্য সৃষ্টি ও দেব-দেবীদের মধ্যে একমাত্র অতি মহারথী ও শ্রেষ্ঠ বীরযোদ্ধা। 

চলুন জেনে নেয়া যাক এই বীরযোদ্ধা ইন্দ্রজিৎ সম্পর্কে।    

ইন্দ্রজিৎ বা মেঘনাদের জননী ছিলেন ময়দানবের কন্যা তথা রাবণের রাজমহিষী মন্দোদরী। রাজমহিষী জন্মের সময় মেঘনাদ চিৎকার করেছিলেন বজ্রনাদের ন্যায় এজন্য তার নামকরণ মেঘনাদ হয়।অন্য দিক থেকে মেঘনাদ আবার  মেঘের আড়াল থেকে ঘোর যুদ্ধ করতেন বলে তার মেঘনাদ নাম হয়।আবার দেবরাজ ইন্দ্রকে তিনি পরাভূত করেছিলেন বলে তাকে নামেও ইন্দ্রজিৎ অভিহিত হন তিনি। 

ইন্দ্রজিতের দুই সহোদরের অতিকায় ও অক্ষয়কুমার নাম। তিনি  ব্রহ্মাস্ত্র, পাশুপতাস্ত্র, বৈষ্ণবাস্ত্র প্রভৃতি দৈব অস্ত্রশস্ত্রের অধিকারী হয়েছিলেন বাল্যকালেই। মেঘনাদ শেষ নাগের কন্যা সুলোচনাকে বিবাহ করেছিলেন।

দানবদের গুরু ইন্দ্রজিৎ রাবণ পুত্র শুক্রাচার্যের শিষ্য।এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন মেঘনাদ লঙ্কার যুদ্ধে।তিনি যুদ্ধে গমন করার পূর্বে সর্বদা এক যজ্ঞানুষ্ঠান করতেন।এই যজ্ঞের অজেয় হয়ে তিনি দুইবার ও লক্ষ্মণকে পরাভূত করেন।কিন্তু তৃতীয় বারে রাবণের অনুজ বিভীষণের সহায়তায় উপস্থিত হয়ে লক্ষ্মণ যজ্ঞাগারে তাকে বধ নিরস্ত্র অবস্থায় করেন। 

রামায়ণ অনুসারে,একবার রাবণ যখন ত্রিলোক জয়ে বেরিয়েছিলে,তখন নিকুম্ভিলা নামক লঙ্কার এক উপবনে মেঘনাদ অগ্নিষ্টোম, রাজসূয়, গোমেধ, বৈষ্ণব,অশ্বমেধ, বহুসুবর্ণক,ও মাহেশ্বর নামে সাতটি যজ্ঞ সম্পাদনা করেন। এই যজ্ঞসমূহের ফলেই তিনি শিবের কাছ থেকে কামগ,  অক্ষয় ইষুধি সহ আরো অনেক অস্ত্র লাভ করেন। মহাদেবের কাছ থেকে এই সকল মায়াবিদ্যা লাভ করে মেঘনাদ মায়াবী নামে অভিহিত হন।

যখন ফিরে আসেন লঙ্কায় যজ্ঞ শেষ হওয়ার পর  রাবণ তখন পুত্রের কাছে তিনি যজ্ঞের সংবাদ লাভ করেন।কিন্তু অতিশয় বিরক্ত হন রাবণ বৈষ্ণব যজ্ঞ করার জন্য। 

ভগবান রামের কথায় যখন হনুমান লঙ্কায় সীতার খোঁজে আসে তখন মেঘনাদের সঙ্গে তার যুদ্ধ হয়েছিল। মেঘনাদ হনুমানকে বন্দী ও করেছিলেন। আবার নিজের ভ্রাতৃগণের মৃত্যুর পর মেঘনাদ যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। শ্রীরামের হাতে পিতা দুর্দশা ও পিতৃব্য রাবণের কুম্ভকর্ণের মৃত্যুর পর তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ হন। তার মোট তিন দিন যুদ্ধ হয়েছিলরাম ও লক্ষ্মণের সঙ্গে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top