শ্রাবন মাসে নির্জলা উপবাস রাখলে মহাদেব অত্যন্ত খুশি হয় । এছাড়া এদিন মহাদেবের পূজা করলে শুভ ফল লাভ হয়। শ্রাবণ মাসের প্রথম সোমবার থেকেই মহাদেবের পূজা করতে হয় , ২০২৫ সালের এই বছর প্রথম সোমবারে পড়েছে একাদশী . অনেকেই ভাবছেন একই দিনে দুই ব্রত করা যাবে কি না? অবস্যই করা যাবে , এ ছাড়া শ্রাবণ মাস জুড়েও পুজো করতে পারেন। এই মহাদেবের উপবাস পুরুষ, মহিলা, ছোট বড় নির্বিশেষে প্রত্যেকেই করতে পারেন। শ্রাবণ মাস মহাদেবের অত্যন্ত প্রিয় মাস। এই মাসে শিবের পুজো করলে তিনি খুবই সন্তুষ্ট হন এবং সকল মনস্কামনা পূরণ করেন। তবে মহাদেবের পুজো করার জন্য বিশেষ কিছু নিয়মাবলী রয়েছে। সেগুলি মেনে পুজো করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। শিব খুব অল্পে সন্তুষ্ট হন। কিন্তু পুজোয় ত্রুটি হলে তিনি খুবই ক্রুদ্ধ হন।
শ্রাবণ মাসের গুরুত্ব
এই পবিত্র শ্রাবণ মাসে শিবের উপাসনা করা হয়। মনে করা হয় এই মাসে শিব-পার্বতী , উভয়েই মর্ত্যে নেমে এসে পৃথিবী ভ্রমণ করেন ও ভক্তদের প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে আর্শীবাদ করেন। প্রতি সোমবার শিবভক্তরা উপবাস রাখেন ও বিশ্বাস করেন, মহাদেব জীবনের যাবতীয় সমস্যার কাণ্ডারি ও সুখ-সমৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবেন । বিবাহতি ভক্তরাও সোমবার উপবাস করে শিবের পুজো করে জীবনে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের আশায় ।
শ্রাবণের সোমবারে এই মহাদেবের উপবাসের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। এই দিন উপবাস নিষ্ঠাভরে পালন করলে দারুণ ফল লাভ হয়, মনের সকল ইচ্ছা পূরণ হয়।
বাংলাদেশে জুলাইয়ের ১৬ তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে শ্রাবণ মাস। শ্রাবণ মানেই মহাদেবের ব্রত পালন, কাঁধে বাঁক নিয়ে তারকেশ্বর যাওয়া, সোমবার করে উপবাস রাখা। বিশ্বাস করা হয় যে, কিন্তু শিবের ব্রত পালনের নানা নিয়ম রয়েছে। সেগুলি আমাদের অনেকেরই জানা নেই। সকল নিয়ম সঠিক উপায় মেনে পালন না করলে মহাদেব কুপিত হতে পারেন। এ বছর শ্রাবণ মাসে ক’টি সোমবার রয়েছে এবং ইংরেজি মাস অনুযায়ী সেগুলি কবে পড়েছে জেনে নিন।
শ্রাবণ মাসের সোমবারের উপবাসের তালিকা:
প্রথম সোমবারের উপবাস: ২১ জুলাই।
দ্বিতীয় সোমবারের উপবাস: ২৮ জুলাই।
তৃতীয় সোমবারের উপবাস: ৪ অগস্ট।
শেষ সোমবারের উপবাস: ১১অগস্ট।

শ্রাবণ মাসের সোমবারের ব্রত পালনের নিয়মাবলী?
১। ব্রত পালনের আগের দিন অবস্যই নিরামিষ আহার করতে হবে. ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠতে হবে। তারপর স্নান করে শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করতে হবে।
২। উপবাস যাঁরা করবেন এবং বাকিরাও এই দিন নখ ও চুল কাটা এড়িয়ে চলবেন। শ্রাবণ মাস জুড়ে সোমবারের এই দিন কোনও ক্ষৌরকর্ম করা যাবে না।
৩। অনেকেই উপবাস রেখে দুপুর বা সকালবেলা গিয়ে বাবার মাথায় জল ঢেলে আসেন। কিন্তু সন্ধ্যাবেলা শিবের পুজো করার জন্য আদর্শ সময় । শিবের অভিষেক করতে পারলে খুব ভাল ফল পাওয়া যায়। যাদের বাসায় শিব লিঙ্গ আছে তারা বাড়িতেই সব কিছুর আয়োজন করে ভক্তি ভরে মহাদেব এর পুজো ও জল দিতে পারেন । একমাত্র মহাদেবই অল্পতে খুশি হয়
৪) শিবপুজোর সময় অবশ্যই ঘি, মধু, সিদ্ধি, দুধ এবং গঙ্গাজল দিয়ে অভিষেক করুন।অভিষেক করার সময়, হলুদ এবং সিঁদুর ব্যবহার করবেন না। পরিবর্তে, চন্দন ব্যবহার করুন। বেলপাতা, ধুতরো এবং আকন্দ ফুল শিবের সবচেয়ে প্রিয়। এই জিনিসগুলো পুজোয় অর্পণ করতে ভুলবেন না।পূজার জন্য গঙ্গাজল বা জল, বিল্বপত্র, ধাতুরা ফল ও ফুল, কাঁচা দুধ, অক্ষত, চন্দন, বিভূতি নিবেদন করুন।দেবী পার্বতী এবং নন্দী পূজা করুন। শ্রাবণ সোমবার ব্রত কথা পড়ুন।
৫) শিবপুজোর সময় শিবলিঙ্গে আতপ চাল এবং যব অর্পণ করুন, শুভ ফল পাবেন। শিবপুজো করার আগে সূর্যদেবকে জল অর্পণ করা খুবই শুভ বলে মানা হয়। শিব আরতি করে ব্রত শেষ করুন।
৬) সন্ধ্যাবেলা জল ঢালার পর প্রদীপ জ্বালাতে হবে। তার পর শিবের মাথায় অর্পিত কিছুটা জল সংগ্রহ করে রেখে সেই জল মুখে দিয়ে উপবাস ভাঙতে হবে। উপবাস ভাঙলেও চালের তৈরি কোনও খাবারও খাওয়া যাবে না এবং আমিষ আহার গ্রহণ করা যাবে না। দুধ, সাবু, ফল, মিষ্টি, , বাতাসা প্রভৃতি খাওয়া যেতে পারে। মহাদেব এর উদ্দেশ্যে নিবেদিত প্রসাদ ও গ্রহণ করা যাবে,
৭) এই দিন কোনও মতে কারও সঙ্গে প্রতারণা করা যাবে না। মিথ্যা কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারও সমালোচনা করাও চলবে না। দান করতে পারলে খুব ভাল হয়।
শিবের পুজো করার সময় যা করতে নেই—
১) শিব ঠাকুরকে কখনও কেতকী ফুল অর্পণ করতে নেই। তুলসীপাতা শিবের পুজোয় ব্যবহার করবেন না। শিবের পুজোয় সব কিছু সাদা রঙের জিনিস ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।