২০২৫ সালে রাখি পূর্ণিমা কবে ? রাখিপূর্ণিমার পুণ্যতিথি ।

রাখি পূর্ণিমার পুণ্যতিথি:

ভাই ও বোনের মধ্যে ভালোবাসার এক পবিত্র বন্ধন উদযাপিত হয় রাখি বন্ধনের মাধ্যমে। ভাইদের হাতে এ দিন বোনেরা রাখি বা রক্ষাসূতা বেঁধে দেন। সনাতন ধর্মে এই দিনটির বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। ভাইয়ের হাতে রাখি বেঁধে তাঁর নীরোগ আরোগ্য জীবনের জন্য প্রার্থনা করেন বোন। একই ভাবে ভাই ও বোনকে সারাজীবন রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেন। ভাই-বোনের সম্পর্ককে আরও মজবুত করে তোলে বলে রাখি বন্ধনের সামাজিক মাহাত্ম্যও অনেক ।  তবে শুধু ভাই -বোনের মধ্যে এই উৎসব সীমাবদ্ধ নেই। যে কোনও ব্যক্তির মঙ্গল কামনায় তাদের হাতে রাখি বাঁধা যায়। গোটা ভারত জুড়ে উদযাপন হয় এই রাখি পূর্ণিমা ।সাধারণত শ্রাবণ বা ভাদ্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে রাখি বন্ধন উৎসব হয়। 

রাধা- কৃষ্ণের ঝুলনযাত্রার শেষে শ্রাবণ পূর্ণিমায় রাখি বন্ধন উৎসব হয়। এবছরও একই দিনে ঝুলনযাত্রার সমাপ্তি ও রাখি পূর্ণিমা। তাই দিনটা অত্যন্ত শুভ। অনেকে এই দিন নানা ধরণের শুভ কাজ সম্পন্ন করে থাকেন। মনে করা হয় এদিন এই সব কাজ করলে, শুভ ফল মিলবে ।  

২০২৫ সালে রাখি পূর্ণিমা কবে?

 পঞ্জিকা অনুসারে, প্রতি বছর শ্রাবণ মাসের এই পূর্ণিমা তিথিতে রাখি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। সেই অনুযায়ী, এবছর ২০২৫ সালে রাখি পূর্ণিমা উৎসবের দিন হল শনিবার ৯ই আগস্ট, ।

তবে, তিথি বা পূর্ণিমার সময়কাল ২০২৫ সালে দুই দিন ধরে রয়েছে |

পূর্ণিমা তিথি শুরু: ৮ই আগস্ট, শুক্রবার, ২০২৫, দুপুর ০২:১২ মিনিটে।

পূর্ণিমা তিথি শেষ: ৯ই আগস্ট, শনিবার, ২০২৫, দুপুর ০১:২৪ মিনিটে।

যেহেতু হিন্দু ধর্মে উদীয়মান সূর্যের তিথিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়, তাই মূল উৎসবটি পালিত হবে ৯ই আগস্ট ।

 রাখি বন্ধনে ভদ্রার ছায়া :

রাখির দিনে ভদ্রার অশুভ ছায়া পড়বে কি না, প্রতি বছর তা একটা বড় প্রশ্ন হয়ে ওঠে । কারণ প্রায় প্রতি বছরেই রাখির উপর ভদ্রার অশুভ ছায়া থাকে । ভদ্রা চলাকালীন রাখি পরানো উচিত নয়। তাই ভদ্রা এড়িয়ে কোন সময় ভাইয়ের হাতে রাখি পরানো যাবে, তা খুঁজতে থাকেন বোনেরা। তবে রাখি বন্ধন ভদ্রার ছায়া থেকে মুক্ত থাকছে এই বছর। রাখি পূর্ণিমায় ভদ্রা পড়ছে ৮ আগস্ট বেলা ২টো ১২ মিনিট থেকে রাত ১টা ৫২ মিনিট পর্যন্ত। যেহেতু রাখি বন্ধন ৯ আগস্ট পালিত হবে, তাই এই বছর রাখিতে ভদ্রার ছায়া থাকছে না

রাখি বাঁধার শুভ মুহূর্ত

যেকোনো শুভ কাজ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়, যা “শুভ সময়” নামে পরিচিত। রাখি বন্ধনের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয় না। শাস্ত্র মতে, সঠিক সময়ে রাখি বাঁধলে ভাই-বোনের সম্পর্কের জন্য তা মঙ্গলজনক হয়।

রাখি বাঁধার শুভ সময়: ৯ই আগস্ট, ২০২৫, শনিবার, সকাল ০৫:৪৭ মিনিট থেকে দুপুর ০১:২৪ মিনিট পর্যন্ত।

শুভ মুহূর্তের সময়কাল: প্রায় ৭ ঘণ্টা ৩৭ মিনিট।

শাস্ত্র অনুযায়ী, দুপুর সময় রাখি বাঁধার জন্য সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করা হয়। যদি কোনো কারণে এই সময়ে সম্ভব না হয়, তবে প্রদোষকালেও রাখি বাঁধা যেতে পারে। তবে ভাদ্র সময়ে রাখি বাঁধা নিষিদ্ধ কারণ এই সময়টিকে অশুভ বলে মনে করা হয়।

রাখি পূর্ণিমার তাৎপর্য ও গুরুত্ব

“রক্ষা বন্ধন” কথাটির মধ্যেই আসলে এর আসল অর্থ লুকিয়ে আছে। সংস্কৃতে ‘রক্ষা’ শব্দের অর্থ হল সুরক্ষা এবং ‘বন্ধন’ শব্দের অর্থ হল বাঁধন। অর্থাৎ, এটি সুরক্ষার বাঁধন। এই দিনে বোনেরা ভাইদের হাতে যে পবিত্র রাখি সুতো বা বেঁধে দেয়, তা কেবল একটি সুতো নয়, এটি তাদের স্নেহ, ভালোবাসা বিশ্বাস এবং প্রার্থনার প্রতীক।

এই উৎসবের গুরুত্ব অনেক গভীর। এটি শুধু ভাই-বোনের সম্পর্ক কেন্দ্রিক নয়, বরং যেকোনো নারী-পুরুষের মধ্যকার পবিত্র ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ককেও সম্মান জানায়। যখন একটি মেয়ে কোনো বন্ধু বা পরিচিতকে ভাই হিসেবে বরণ করে রাখি পরায়, তখন সেই সম্পর্কও ভাই বোনের সম্পর্কের মর্যাদা পায়।

রাখি উৎসবের পৌরাণিক কাহিনী

রাখি পূর্ণিমার প্রচলন কবে থেকে শুরু হয়েছিল, এটা নিয়ে একাধিক পৌরাণিক কাহিনী প্রচলিত আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং দ্রৌপদীর কাহিনী।

মহাভারতের বর্ণনা অনুযায়ী, একবার যুদ্ধের সময় শিশুপালকে বধ করার সময় শ্রীকৃষ্ণের সুদর্শন চক্রে তাঁর আঙুল কেটে রক্তপাত হতে শুরু করে। সেই সময় সেখানে উপস্থিত সকলে যখন কেবলই ছোটাছুটি করছিলেন, তখন দ্রৌপদী কোনও দ্বিধা না করে নিজের শাড়ির আঁচল ছিঁড়ে শ্রীকৃষ্ণের আঙুলে বেঁধে দিয়েছিলেন। দ্রৌপদীর এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় শ্রীকৃষ্ণ আপ্লুত হন এবং তাঁকে বর দেন যে, তিনি এর প্রতিদান দেবেন এবং সর্বদা তাঁকে রক্ষা করবেন। পরবর্তী সময়ে, কৌরবদের রাজসভায় যখন দুঃশাসন দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করার চেষ্টা করেছিল, তখন শ্রীকৃষ্ণ তাঁর সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছিলেন এবং দ্রৌপদীর সম্মান

রাখি পূর্ণিমা

শুভ- অশুভ রাখি 

না জেনে অনেক সময়, ভুল রাখি কিনে ফেলেন অনেকেই। যেটা আসলে অত্যন্ত অশুভ। তাই ভেবে চিন্তে রাখি কেনা উচিত। বর্তমানে বাজারে নানা রকমের রাখি পাওয়া যায় । বিশেষত চীন থেকে যে সমস্ত রাখি আসে, সেগুলি দেখতে খুব সুন্দর । কিন্তু জ্যোতিষাচার্যদের মতে, এই ধরনের রাখি অত্যন্ত অশুভ। রেশম বা সুতির তৈরি রাখি ব্যবহার করা শুভ বলে মনে করা হয়। এই ধরনের রাখি বাঁধলে ভাইদের খ্যাতি বাড়ে।

হাত থেকে রাখি কখন খোলা যাবে?

শাস্ত্র অনুসারে হাতে রাখি অন্তত ২৪ ঘণ্টা পরে থাকা ভালো। তার আগেই রাখি খুলে ফেললে এর শুভ প্রভাব পুরোপুরি পাওয়া যায় না। জন্মাষ্টমী পর্যন্তও হাতে রাখি রাখতে পারেন। অনেক ভাই রাখি নিজে থেকে হাত থেকে খুলে না যাওয়া পর্যন্ত রাখি পরে থাকেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top