কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশ তিথিতে ধনতেরাস পালিত হয়। যা স্বাস্থ্য, সমৃদ্ধি এবং মঙ্গলের প্রতীক বলে বিবেচিত হয়। এ বছর ধনতেরাস কবে পড়েছে, ১৮ না ১৯ অক্টোবর?
ধনতেরাস শুধুই সম্পদের উৎসব নয়। এটি সুখ ও সমৃদ্ধির এক বৃহৎ প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। ধনতেরাসের সকলের জীবনে সম্পদের পাশাপাশি আনন্দ ও ঐশ্বর্য নিয়ে আসে। ধনতেরাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে একটি পৌরাণিক কাহিনি। কথিত আছে, সেই কাহিনির অব্যবহিত পর থেকেই মহাধুমধামসহকারে প্রতি বছর হিন্দুরা ধনতেরাস উৎসব পালন করে থাকে।
ধনতেরাস কখন?
পঞ্জিকা অনুসারে ২০২৫ সালে ১৮ অক্টোবর, শনিবার পড়েছে ধনতেরাস। এই দিন ধন সম্পদের দেবী মা লক্ষ্মী, ও ধন সম্পদের দেবতা কুবের এছাড়াও ধন্বন্তরির পুজো করা হয়। এই তিথিকে ধনত্রয়োদশী ও ধন্বন্তরি জয়ন্তীও বলা হয়। দৃক পঞ্জিকা অনুযায়ী, এ বছর কার্তির কৃষ্ণ ত্রয়োদশী তিথি ১৮ অক্টোবর শনিবার দুপুর ১২.১৮ মিনিটে শুরু হবে। এবং ১৯ অক্টোবর রবিবার দুপুর ১.৫১ মিনিট পর্যন্ত চলবে।

Bengali kirtan
বিশেষ যোগ ও নক্ষত্রের সমাহার ধনতেরাসে
চলতি বছরে ধনতেরাসে ব্রহ্ম যোগ ও উত্তরা ফাল্গুনী নক্ষত্রের সংমিশ্রণ ঘটবে। ওই দিনে ব্রহ্ম যোগ ১৮ অক্টোবর সকালে শুরু হবে। রাত ১.৪৮ মিনিট অবধি থাকবে। এরপর পূর্বফাল্গুনী নক্ষত্র সকাল থেকে বিকেল ৩.৪১ মিনিট অবধি থাকবে। এরপর উত্তর ফাল্গুনী নক্ষত্র যোগ থাকবে।
ধনতেরাসের পুজোর শুভ সময়
ধনতেরাসের সন্ধেতে পুজো করা অত্যন্ত ফল প্রদানকারী বলে মনে করা হয়। এ বছর ১৮ অক্টোবর ধনতেরাসের পুজোর শুভ সময় হবে সন্ধ্যা ৭.১৬ থেকে রাত ৮.২০ পর্যন্ত। এই সময় দেবী লক্ষ্মী, গণেশ ও কুবেরের পুজো করা উচিত। এই দিনে সোনা, রুপো, গয়না, যানবাহন, সম্পত্তি কেনা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়।
- ব্রহ্ম মুহূর্ত – ভোর ৪.৪৩ মিনিট থেকে ৫.৩৩ মিনিটপর্যন্ত।
- অভিজিৎ মুহূর্ত – সকাল ১১.৪৩ মিনিট থেকে দুপুর ১২.২৯ মিনিট পর্যন্ত।
- প্রদোষ কাল – রাত ৫.৪৮ মিনিট থেকে রাত ৮.২০ মিনিট।
- বৃষভ কাল – সন্ধ্যে ৭.১৬ মিনিট থেকে রাত ৯.১১ মিনিট পর্যন্ত।
ধনতেরাসের উৎপত্তির নেপথ্যে
ধনতেরাসের উৎপত্তির নেপথ্যে যে কাহিনি রয়েছে, তা হল রাজা বলির কাহিনি। বিষ্ণুর এক অবতারও এই কাহিনির সঙ্গে জড়িত। তখন রাজা বলির পৃথিবীতে প্রবল প্রতিপত্তি। যুদ্ধের মাধ্যমে তিনি দখল করে বসেছেন এই বিশাল বিস্তৃত সাম্রাজ্য। তাঁর এই রাজ্যজয় ও সম্পত্তির নেশা ভীত করেছিল সমস্ত দেবতাগণকে। সবাই গিয়ে তখন শরণাপন্ন হন ভগবান বিষ্ণুর। ভগবান বিষ্ণু তখন অবতীর্ণ হন বামন রূপে। রাজা বলির যজ্ঞে বামন হয়ে তিনি গেলে রাজা তাঁকে কিছু দানের ইচ্ছে প্রকাশ করেন।
শুক্রাচার্য বুঝেছিলেন তাঁর স্বরূপ
রাজা বলির সেই যজ্ঞে উপস্থিত ছিলেন শুক্রাচার্য স্বয়ং। তিনি বামনের স্বরূপ চিনতে পারেন। সতর্ক করেন রাজা বলিকে। কিন্তু মদগর্বিত রাজা পিছপা হননি। তিনি বামনকে ইচ্ছাপ্রকাশ করতে বলেন। সেই সময় বামনরূপী বিষ্ণু তাঁর তিনটি পদক্ষেপের সমান জমি কামনা করেন। রাজা ভাবেন, এ আর এমন কী। কিন্তু বামনের প্রথম পদক্ষেপে গোটা পৃথিবী আচ্ছন্ন হয়। দ্বিতীয় পদক্ষেপে গোটা স্বর্গ। এর পর তৃতীয় পদক্ষেপ কোথাও রাখার স্থান হচ্ছিল না। সেই সময় বামনই প্রশ্ন করেন রাজাকে, বলুন কোথায় রাখব। রাজা তাঁর ভুল বুঝতে পারেন। তিনি মাথা নত করে বলেন, আমার মস্তকে রাখুন প্রভু। এরপর তৃতীয় পদক্ষেপ তাঁর মস্তকে রাখেন বিষ্ণু। কথিত আছে, রাজা বলির কাছ থেকে যা যা পুনরুদ্ধার করেছিলেন বিষ্ণু, সেসবই বহুগুণ বাড়িয়ে ফেরত করেন দেবতাগণকে। সেখান থেকেই পালন করা হয় ধনতেরাসের এই উৎসব।