জন্মাষ্টমী হল ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন, যা হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মহা ধুমধামে পালন করে থাকে। এটি “কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী” বা “গোকুলাষ্টমী” নামেও পরিচিত। ২০২৫ সালে, জন্মাষ্টমী তিথি শুরু হবে ১৫ আগস্ট এবং শেষ হবে ১৬ আগস্ট। এই দিনটিতে উপবাস, পূজা-অর্চনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পূজা করা হয়।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, ভাদ্র মাসের কৃষ্ণ পক্ষের অষ্টমী তিথিতে শ্রী কৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর উৎসব পালিত হয়। হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, এই তিথিতেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কংসের কারাগারে আবির্ভাব ঘটেছিল। এই দিনে বিশেষভাবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শৈশব রূপ, অর্থাৎ নাড়ু গোপালের পূজা করা হয়।
ভারতবাংলার সনাতন ধর্মাম্বলীরা অনেক উৎসাহ এবং ভক্তিভরে পালন করে এই জন্মাষ্টমী। এই পবিত্র দিনে ভক্তরা উপবাস পালন করেন এবং রাতে শ্রীকৃষ্ণের জন্ম মুহূর্তে পূজা ও কীর্তনের মাধ্যমে জন্মানুষ্ঠান উদযাপন করেন। তারপর তারা উপবাস ভঙ্গ করেন। আসুন জেনে নিই, ২০২৫ সালে কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী কবে পড়ছে।
বৈদিক পঞ্জিকা অনুযায়ী, ভাদ্র মাসের কৃষ্ণ পক্ষের অষ্টমী তিথিতে কৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর উৎসব পালিত হয়। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, এই তিথিতেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটেছিল। এই দিনে বিশেষভাবে শ্রীকৃষ্ণের শৈশব রূপ, অর্থাৎ নাড়ু গোপালের পূজা করা হয়।

শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর শুভ মুহূর্ত (Janmashtami Puja Muhurat):
এই বছর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণ পক্ষের অষ্টমী তিথিতে শুরু হচ্ছে জন্মাষ্টমীর শুভ মুহূর্ত ১৫ আগস্ট রাত১১ টা ৪৯ মিনিটে এবং শেষ হবে ১৬ আগস্ট সন্ধ্যা ১১টা ৪৯ মিনিটে। উদয় তিথি অনুযায়ী জন্মাষ্টমী পালিত হবে ১৬ আগস্ট শনিবার ২০২৫ তারিখে এবং উপবাস ভঙ্গ করা হবে রবিবার, ১৬ আগস্টে।
পূজার শুভ সময়:
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পূজা করা হবে মধ্যরাত্রি ১২টা ৪৫ মিনিট থেকে ১টা ২৬ মিনিট পর্যন্ত।
রোহিণী নক্ষত্র:
রোহিণী নক্ষত্র শুরু হবে ১৭ আগস্ট দুপুর ১টা ৮ মিনিটে এবং শেষ হবে ১৭ আগস্ট রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে।
শাস্ত্রে বর্ণিত আছে, কেউ যদি এক বার শ্রীকৃষ্ণের এই জন্মাষ্টমী উপবাস পালন করেন, তা হলে তাঁকে আর এই জড় জগতে জন্ম, মৃত্যু, ব্যাধি, কষ্ট ভোগ করতে হয় না এবং পুনর্জন্ম গ্রহণ করতে হয় না।
আসুন সবাই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই শুভ জন্মাষ্টমীর ব্রত পালন করি। জেনে নেওয়া যাক কী ভাবে জন্মাষ্টমী ব্রত পালন করবেন:
১। জন্মাষ্টমীর আগের দিন নিরমিষ খেয়ে সংযম পালন করতে হবে এবং রাত ১২টার মধ্যে খেয়ে নিতে হবে। ঘুমনোর আগে অবশ্যই ভাল করে ব্রাশ করে মুখ ধুয়ে ঘুমতে হবে। মুখে যেন কোন অন্নের কনা লেগে না থাকে
২। জন্মাষ্টমীর দিন সকাল থেকে মধ্য রাত্রি পর্যন্ত উপবাস এবং জাগরণ। উপবাস থেকে ভগবানকে দর্শন, হরিনাম জপ, কৃষ্ণ লীলা শ্রবণ, অভিষেক দর্শন , ভক্ত সঙ্গে হরিনাম কীর্তন, করতে হবে এবং ভগবানকে অভিষেক করে একাদশীর দিনের মতো অনুকল্প প্রসাদ সেবন করতে হবে।
জন্মাষ্টমীর দিন শ্রীকৃষ্ণের পূজার সময় শঙ্খে করে পঞ্চামৃত (ঘি, দুধ, দই, চিনি, মধু) দিয়ে অভিষেক করার নিয়ম আছে। এটি করলে শুভ ফল পাওয়া য,য় বলে বিশ্বাস।
গোপালের প্রিয় ভোগ কী ?
জন্মাষ্টমীর রাতে মধ্যরাত্রির সময় পূজারত অবস্থায় নাড়ু গোপালকে তাঁর প্রিয় মাখন-মিশ্রি ভোগে নিবেদন করুন। ভোগে অবশ্যই তুলসীপাতা দিন, কারণ তুলসী ছাড়া ভোগ অপূর্ণ বলে মনে করা হয়।
নিজ বাড়িতে পুজোর নিয়ম :
বাড়িতে শ্রীকৃষ্ণের ছবি বা মূর্তি স্থাপন করে সারাদিন উপবাস রেখে রাতে ভক্তিভরে পূজা করা হয়।
পূজার জন্য ফুল, আতপ চাল, পাচ্ রকমের ফল, তুলসী পাতা, ধূপ, দীপ, পঞ্চগুড়ি, পঞ্চবর্ণের গুড়ো, পঞ্চগব্য মধু, এবং অন্যান্য উপকরণ সংগ্রহ করতে হয়।
শ্রীকৃষ্ণের মূর্তিকে গঙ্গাজল বা সাধারণ জল দিয়ে স্নান করিয়ে নতুন পোশাক পরানো হয়।
গোপালের প্রিয় খাবারগুলির মধ্যে রয়েছে মাখন মিছরি, , তালের বড়া,ক্ষীর, রাবরি, মালাই , ননী,নাড়ু মালপোয়া ইত্যাদি, যা সাজিয়ে গোপালের সামনে ভোগ হিসেবে নিবেদন করতে পারেন৷ এতে কৃষ্ণা অত্যন্ত খুশি হন, আবার কেউ যদি এগুলো জোগাড় না করতে পারেন তাহলে ভক্তি ভরে ভগবানকে শুধু তুলসীপত্র দিলেও তিনি গ্রহণ করেন. প্রথমে শ্রী গণেশের প্রার্থনা(ওম শ্রী গণেশায় নমহা) মন্ত্র পাঠ করতে হবে ৷ এরপর কিছুক্ষণ ধ্যান করতে হবে মন যাতে শান্ত থাকে। প্রদীপ জ্বালাতে হবে। শ্রীকৃষ্ণের প্রার্থনা (‘ওম নমঃ ভাগবতে বাসুদেবায়’) মন্ত্র পাঠ করতে হবে । এরপর ফুল অর্পন করতে হবে। তুলসি পাতা দিতে হবে । তাছাড়া ধূপ জ্বালাতে হবে।
ফুল অর্পন করার সময় ঘন্টা বাজাবেন। ‘ওম নমঃ ভাগবতে বাসুদেবায়’ উচ্চারন করে যেতে হবে। এরপর ফল, মিষ্টি এবং অন্যান্য খাদ্য অর্পন করতে হবে। প্রার্থনা শেষে কিছুটা জল ছিটিয়ে দিতে হবে। কৃষ্ণ ভগবানের এই মন্ত্র বেশ কয়েকবার মনে মনে উচ্চারন করা যেতে পারে পূজার সময় ভক্তিভরে আরতি করা হয় এবং মন্ত্র পাঠ করা হয়। মধ্যরাতে শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি উপলক্ষে বিশেষ পূজা ও আরতি করা হয়।
। পূজা শেষে কিছুক্ষন পূজার স্থান থেকে সরে আসতে হবে, তারপর কিছুক্ষন পর কৃষ্ণকে প্রণাম করে কৃষ্ণের থেকে অনুমতি নিয়ে প্রসাধ নিয়ে এসে সবাইকে বিতরণ করতে হবে। পুজো শেষে ভগবত পাঠ করতে পারেন
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কিছু শক্তিশালী মন্ত্র :
“ॐ দেবিকানন্দনায়া বিধামহে বাসুদেবায় বিধামহে তন্নো কৃষ্ণঃ প্রচোদয়া“
“ওম ক্লীম কৃষ্ণায় নমঃ“
“ওমে গোকুল নাথ“
“ক্রীম কৃষ্ণায় নমঃ |“
৩। তবে যারা অসুস্থ উপবাস পালনে সমস্যা, তাঁরা অবশ্যই দুপুর ১২ টার পরে, কৃষ্ণের কাছে ক্ষমা চেয়ে, একটু দুধ, বা ফল খেতে পারবেন। তবে এই ব্রতে একাদশীর মতোই অন্ন-সহ পঞ্চ রবি শস্য খাবার বিধান নেই।
৪। জন্মাষ্টমীর পরের দিন সকালে স্নান করা শেষে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পারণ মন্ত্র পাঠ করে শ্রীকৃষ্ণের প্রসাদ দিয়ে পারণ করবেন।
আসুন পারণ মন্ত্র জেনে নেওয়া যাক:
পারণ আরম্ভের মন্ত্র: “সর্বায় সর্বেশ্বরায় সর্বপতয়ে সর্বসম্ভবায় গোবিন্দায় নমো নমঃ।”
পারণান্তে মন্ত্র: “ভূতায় ভূতেশ্বরায় ভূতপতয়ে ভূতসম্ভবায় গোবিন্দায় নমো নমঃ।”
এ ভাবে জন্মাষ্টমীর ব্রত পালন করতে হয়।