ষোলো সোম ব্রত একটি জনপ্রিয় হিন্দু ব্রত, যা মূলত ভগবান শিবের উদ্দেশ্যে পালন করা হয় এবং এর মাধ্যমে শান্তি, সমৃদ্ধি, এবং আকাঙ্ক্ষা পূরণের কামনা করা হয়। এই ব্রত পালনের জন্য নির্দিষ্ট নিয়মাবলী অনুসরণ করতে হয়, যার মধ্যে রয়েছে ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠা, স্নান করে শুদ্ধ হওয়া, ভগবান শিবের পূজা করা, এবং নির্দিষ্ট কিছু খাবার থেকে বিরত থাকা।
ষোলো সোম ব্রতের নিয়মাবলী ও পদ্ধতি:
◆ সকালে সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে শুদ্ধ হতে হয়। স্নান করে শুদ্ধ পোশাক পরে বসতে হবে শিবের পুজোয়। প্রথমে শিবলিঙ্গ স্থাপন করুন বাড়ির বা ঠাকুর ঘরের উত্তর মুখে।
◆ একটি পাত্রে বেলপাতা, চাল, ফুল, ধূপ, চন্দন, কর্পূর সব রেখে দিন একসঙ্গে। এরপর শিবলিঙ্গে জল, দুধ, বেলপাতা, ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে পূজা করুন । এরপর শিবের আরতি করুন এবং ব্রতকথা শুনুন বা পাঠ করুন । পারলে এই দিন শিবের অষ্টোত্তর শতনাম পাঠ করুন। সন্ধ্যায় ফের একবার আরতি করুন আর সন্ধ্যেবেলা আর ও একবার জল ঢেলে সেই জল ঢালার সময় কিছুটা জল সংগ্রহ করে সেটা গ্রহণ করে উপবাস ভঙ্গ করুন
◆এই দিন নুন ছাড়া খাবার খাওয়া উচিৎ। ব্রত পালনকারী ভক্তরা সাধারণত ফল, দুধ, দিয়ে তৈরি মিষ্টি এবং দুধ ও জল পান করে থাকেন। যারা লবণ এড়াতে পারেন না, তারা দিনে একবার সেন্ধা লবণ ব্যবহার করতে পারেন, তবে শস্য বর্জন করুন। সেক্ষেত্রে ফল বা দুধ জাতীয় খাবার খাওয়াই ভালো।
◆ শ্রাবণ মাস, কার্তিক মাস বা ফাল্গুন মাসের প্রথম সোমবার থেকে শুরু করে ষোলো সোমবার পর্যন্ত এই ব্রত পালন করা হয়।
◆ তবে শ্রাবন মাসে ব্রত শুরু করা সবথেকে শুভ তারপর তা না থামিয়ে ১৬টি সোমবার করা উচিৎ। ষোলো সোমবার পালনের সময় যদি কারো পিরিওড হয়. তাহলে সেই সোমবারে শিবের মাথায় জল দিবেন না, যে কয়টা সোমবার এমন হবে সেই কয়টা সোমবার সবার শেষে করে দিবেন, অনেক চাইলে এই দিন গায়ে উপবাস করতে পারেন কিন্তু জল দিতে পারবেন না. এতে আপনার মনের ইচ্ছে অবশ্যই পূরণ হবে।
সোম ব্রতের মাহাত্ম্য:
- সোমবারকে শিবের দিন হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এই দিনে তাঁর আরাধনা করলে তিনি ভক্তদের প্রতি অত্যন্ত প্রসন্ন হন বলে বিশ্বাস করা হয়।
- সোম ব্রত পালনের মাধ্যমে জীবনে আসা যেকোনো সমস্যা দূর হয় এবং পরিবারে সুখ-শান্তি বজায় থাকে।
- ষোলো সোমবার ব্রত নিষ্ঠার সাথে পালন করলে মনের জোর বৃদ্ধি পায় এবং জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। বিশ্বাস করা হয় যে মনে কোনো ইচ্ছা রেখে শিবের মাথায় ১৬ টি সোমবার ভক্তি ভরে জল দিলে মনের সেই ইচ্ছা পূরণ হয়.
ষোলো সোমবারের ব্রত কথা :
ষোলো সোমবার ব্রত চালু হওয়ার মূলে একটি গল্প প্রচলিত আছে। একবার নাকি শিব পার্বতীকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন মৃত্যুলোকে। সেখানে মৃত্যুপুরীর রাজা তাঁর জন্য সুন্দর একটি প্রাসাদ বানিয়ে রেখেছিলেন এবং শিব-পার্বতী ওখানেই ছিলেন। এক দিন পার্বতী বললেন, তাঁর পাশা খেলতে ইচ্ছে করছে। পাশা খেলার ব্যবস্থা করা হল। সেই সময়ে সেখানে এসে উপস্থিত হলেন এক মন্দিরের পুরোহিত। পুরোহিতকে পার্বতী জিজ্ঞাসা করলেন কে জিতবে এই খেলায়। পুরোহিত কিছু না ভেবেই উত্তর দিলেন, মহাদের জিতবেন। কিন্তু খেলার শেষে জিতলেন পার্বতী। তখন পার্বতী রেগে গিয়ে মিথ্যা বলার অপরাধে পুরোহিতকে কুষ্ঠ রোগ হওয়ার অভিশাপ দিলেন।
অনেক দিন পর সেই মন্দিরে কিছু অপ্সরা এসেছিলেন আর পুরোহিতের এই অবস্থা দেখে এর কারণ জানতে চাইলেন। পুরোহিত সব বলায় অপ্সরারা তাঁকে ষোলো সোমবারের ব্রত পালন করতে বললেন। এই প্রথম পুরোহিত ষোলো সোমবারের ব্রত শুরু করলেন। ভোলানাথের আশীর্বাদে পুরোহিত সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলেন। এই ঘটনা জেনে পার্বতী অবাক হয়ে গেলেন। তাঁর দেওয়া অভিশাপ কীভাবে খণ্ডিত হল! তিনি পুরোহিতকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন আর জানলেন ষোলো সোমবারের কথা। সব জেনে পার্বতীও ঠিক করলেন ষোলো সোমবার করার কথা।
এরপর এই ব্রতের কথা পার্বতীর থেকে জানতে পারেন কার্তিক। কার্তিক সেই কথা তাঁর এক ব্রাক্ষ্মণ বন্ধুকে বলেন। ব্রাক্ষ্মণ বন্ধুও তখন এই ব্রত করার সিদ্ধান্ত নেন এবং নিষ্ঠাভরে পালন করেন। এক সময়ে সেই বন্ধু এক দেশে যান, যেখানে সেই দেশের রাজার কন্যার স্বয়ম্বর হচ্ছিল। স্বয়ম্বরের নিয়ম ছিল, সভায় থাকা হাতি যার গলায় মালা দেবেন তিনিই হবেন রাজার জামাই। হাতি সেই ব্রাক্ষ্মণ সন্তানের গলায় মালা দিল। আর তিনি পেয়ে গেলেন রাজকন্যা আর রাজ্য। তিনি বুঝলেন এই ষোলো সোমবার করার ফল তিনি এভাবে পেলেন। এরপর ফুলশয্যায় তাঁর স্ত্রী তাঁকে যখন জিজ্ঞাসা করলেন যে কেন হাতি তাঁকেই মালা পরালো, তখন তিনি ওই ব্রতের কথা জানালেন। রাজকন্যাও তখন এই ব্রত করলেন আর তাঁর একটি পুত্র সন্তান হল।