বিষ্ণুর বাহন গরুড় এর জন্মকাহিনী

গরুড় ভগবান বিষ্ণুর বাহন।পূরাণে মহাবলশালী গরুড় পাখির অনেক বর্ণনা পাওয়া যায়। বিষ্ণুর বাহন গরুড় এর রয়েছে আকর্ষণীয় এক জন্মকাহিনী।

পৌরাণিক শাস্ত্রে, গরুড়ের রূপকে মাঝামাঝি পর্যায়ে কল্পনা করা হয়েছে বাজপাখির  কাঠামোর মাঝে সুঠাম মনুষ্য দেহের। বর্ণনা অনুযায়ী, গরুড়ের দেহ স্বর্ণের মতো, মুখমণ্ডল সাদা বর্ণের, এবং দুটো  বিশাল বিস্তৃত ডানা লাল রঙের ।

পা দুটোও ঈগলের মতো এবং গরুড়ের বিশাল ঠোঁট ঈগলের মতোই। তার ডানা দুটো এতই  বিশাল ছিলো যে সেগুলো ঢেকে ফেলতে সূর্যালোককে পারতো একটি নির্দিষ্ট এলাকার।প্রজাপতি দক্ষের দুই কন্যা বিনতা ও কদ্রুর বিবাহ হয়েছিল মুনির সাথে ঋষি “কশ্যপ”। দৈত্যকুলের পিতা হিসেবে স্বীকৃত এবং কশ্যপ মুনি দেবতা।

বিনতা ও  কদ্রু ছাড়াও কশ্যপ মুনির আরো দু’জন পত্নী ছিলো। তারা ছিল দিতি ও অদিতি।  দিতির পুত্ররা  ছিলো দৈত্য, আর অদিতির সন্তানদের বলা হতো দেবতা। বিয়ের পর বিনতা ও  কদ্রু সন্তান প্রার্থনা করলেন কশ্যপ মুনির কাছ থেকে।বিনতা দুই পক্ষী সন্তানের মা হতে চাইলেন এবং কদ্রু মা হতে চাইলেন হাজার  নাগ সন্তানের। ঋষি  কশ্যপ তাদের বর মঞ্জুর করলেন। যথাসময়ে তারা দু’জনেই ডিম প্রসব করলেন।

 ডিম প্রসবের পর কদ্রুর হাজার নাগ সন্তান জন্ম লাভ করলো। কিন্তু বিনতার  দুটি ডিম ফুটে সন্তানদের এই পৃথিবীতে  আসার কোনো সংবাদই নেই। বছরের পর বছর এমনি ভাবে চলে যেতে লাগলো, আর  তখন বিনতার মাতৃমন উতলা হয়ে উঠতে লাগলো। তার একটি ডিম ফাটিয়ে  ফেললেন এবং একদিন বিনতার ধৈর্য ভেঙ্গে গেলো । তারপর তিনি দেখতে পেলেন, ঐ ডিমের ভেতরে অর্ধেক মানুষ আর অর্ধেক পাখির  মতো বৈশিষ্ট্যের এক অপরিপক্ক সন্তান রয়েছে। কিন্তু  অকালে ডিম ভেঙ্গে তার জন্ম  সম্ভাবনা নষ্ট করে দেয়ার জন্য সন্তানটি বিনতাকে অভিশাপ দিয়ে বললো, যতদিন  পর্যন্ত না তোমার দ্বিতীয় ডিম থেকে সন্তান ভূমিষ্ঠ হবে ততদিন তুমি তোমার  বোনের দাসত্ব করবে।

এই বলে সে হঠাৎ  উড়ে চলে গেলো সূর্যের দিকে। তার নাম হলো অরুণ এবং সে সূর্যের সারথি হলো রথের অন্যতম । পরবর্তীতে  বিনতা একদিন তার বোন কদ্রুর সাথে পাশা খেলায় হেরে  যান, এবং শর্তানুসারে বিনতাকে কদ্রুর দাসী হয়ে থাকতে হয়। এভাবেই বিনতাকে দেওয়া তার সন্তানের অভিশাপ ফলেছিল।এরপর বহু বছর পর বিনতার  দ্বিতীয় ডিম হতে গরুড়ের জন্ম হয়। ডিম  ভেঙ্গে বেরিয়ে এসে  গরুড় ক্রোধন্মত্ত হয়ে মহাবিশ্বে ধ্বংসের তাণ্ডব চালাতে থাকলেন। এই  বিপুল ধ্বংসলীলা দেখে দেবতারা গরুড়ের কাছে  শান্তির জন্য প্রার্থনা করলে, গরুড় সন্তুষ্ট হয়ে শক্তির পরিমাণ  ও তার আকার কমিয়ে আনলেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top