মহাভারত থেকে আমরা কি কি শিক্ষা পাই

মহাভারত হিন্দুধর্মের একটি অন্যতম ধর্মগ্রন্থ।এই ঘটনা থেকে অনেক শিক্ষা অর্জন করা যায়। আজ আপনাদের জানাবো মহাভারত আমাদের কি কি শিক্ষা দেয়।

১.সঠিক সিদ্ধান্ত : মহাভারতের একাধিক চরিত্রে দেখা যায় অনেক বড় বড় মহারথী ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করে শুধুমাত্র সামনের ঘটনাকে পরিলক্ষিত করে সিন্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন। এবং পরে তার খেসারত ও দিতে হয়েছিল। যেমন মহামহিম ভীষ্মের হস্তিনাপুরের সিংহাসন রক্ষার প্রতিজ্ঞা এবং কর্ণের মিত্রের প্রতি সমর্পনের জন্য সারাজীবন অধর্ম এবং কষ্ট সহ্য করতে হয়েছিল। এই সব  চরিত্র থেকে আমরা শিক্ষা পাই যে ,কোনো  বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে  মাথা ঠান্ডা করে ভবিষ্যৎ পরিণামের কথা  চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

২.অর্ধশিক্ষা ভয়ঙ্কর : অভিমন্যু শুধু চক্রবুহে প্রবেশ করতে পারতেন বের হতে পারতেন না। যুদ্ধের সময় অর্জুনের অনুপস্থিতে অভিমন্যুকে চক্রবুহে প্রবেশ করতে হয়েছিল , কিন্তু তিনি বের হতে পারতেন না বলে কৌরবদের মহারথীরা অভিমন্নু কে অন্যায়ভাবে হত্যা করার সুযোগ পায়। তাই অর্ধেক জ্ঞান যে কোনো সময় মানুষকে বিপদে ফেলতে পারে। মহাভারত আমাদেরকে যেকোনো বিষয়ে সঠিক এবং সম্পূর্ণরূপে জ্ঞান অর্জনের শিক্ষা দেয়।

৩.সংঘর্ষ : কৌরবরা সবসময় পাণ্ডবদের হস্তিনাপুরের সিংহাসন থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করতো। যুধিষ্টির হস্তিনাপুরের সিংহাসনের যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও তাকে রেখে দুর্যোধন সিংহাসনে বসতে চাইতো। পাণ্ডবরা এই অন্যায়কে প্রশ্রয় না দিয়ে তারা সংঘর্ষ করেছিলেন। এবং যার ফলে পরিশেষে তারা রাজ্যের অধিকার পেয়েছিলো । এজন্য জীবনে সাফল্য অর্জন করতে সংঘৰ্ষ করতেই হবে। সেটা শত্রুর সাথেই হোক বা জীবনের সাথে।যতই কঠিন হোক না কেন পরিস্থিতি,হার মানলে চলবে না ।আমাদের  সংঘর্ষই পৌঁছতে পারে সাফল্যের দোরগোড়ায়। 

৪.আত্মবিশ্বাস : ধৃতরাষ্ট্র অন্ধ হওয়া  সত্ত্বেও শুধুমাত্র আত্মবিশ্বাস এর জন্য একটি বিশাল বড় সাম্রাজ্যকে তিনি সামলেছিলেন  ও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন । নিজের উপরে ভরসা রাখার শিক্ষা দেয় মহাভারত। নিজের ক্ষমতার উপরে আস্থা থাকলে যে কোনও পরিস্থিতিতেই  সাফল্য মেলে। তাই নিজের প্রতি কখনোই আস্থা হারানো উচিত নয় কারণ এই আত্মবিশ্বাস জিনিসটি সঙ্গে থাকলে কোন সাফল্যই দূরে থাকবে না।

৫.নির্ভীকতা : মানুষের  লক্ষ্যে পৌঁছনোর পথে সবচেয়ে বড় বাধা ‘ভয়’। আর এই ভয়ের জন্যই মানুষ  বিভিন্ন কাজ কে এড়িয়ে চলে এবং সাফল্য পাবে  না ভেবে মাঝপথেই হতাশ হয়ে কাজকে ছেড়ে দেয় ।নিজের মন থেকে ভয় দূর না করলে কোনও দিন  সফল হওয়া সম্ভব নয়।  মহাভারত আমাদেরকে নির্ভীক হওয়ার শিক্ষা দেয়।কারণ কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুন যখন দেখেছিলেন  তার সমস্ত আত্মীয় পরিজনদের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করতে হবে তখন তিনিও নিজের পরিজনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ভয় পেয়েছিলেন  । পরবর্তীকালে কৃষ্ণের বাণীতে তিনি নির্ভীক হয়েছিলেন বলেই এই যুদ্ধে সাফল্য অর্জন  করতে পেরেছিলেন।

৬.অসৎসঙ্গ পরিত্যাগ: ধৃতরাষ্ট্র এবং দুর্যোধনের মন কুলুষিত করেছিলেন মামা শকুনি। তিনিই ছিলেন কৌরবদের ধ্বংসের মূল কারণ। মামা শকুনি যদি না থাকতেন তাহলে মহাভারতের যুদ্ধ সংঘটিত হতো না। এই জন্য মানুষকে অসৎ ও দুষ্টু লোকের সঙ্গ ত্যাগ করে চলা উচিত।

৭.মেয়েদের অসম্মান না করা : মহাভারতে দ্রৌপদীর যদি অসম্মান না হতো তাহলে  কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ হয়তো হতো না। মামা শকুনির পরামর্শে পাণ্ডবদের হস্তিনাপুর আমন্ত্রণ জানিয়ে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করে কৌরবরা চরম অন্যায় করে। দ্রৌপদীর অভিশাপে কৌরবরা ধ্বংস হয়।  কুলবধূকে কখনো অসম্মান করতে নেই । তারা বংশের গর্ব। যারা মেয়েদের সম্মান করে না তাদের কখনো ভালো হয় না। এজন্য সবাইকে মেয়েদের সম্মান করে চলা উচিৎ।

৮.সবকাজে দক্ষতা অর্জন :  মানুষের জীবনে কখন কি ঘটতে পারে কেউ জানেনা। খুব  ধনী ঘরে জন্ম নিয়েও মানুষকে খুব কষ্টে জীবনযাপন করতে হতে পারে। যেমন রাজপরিবারে জন্ম নেওয়া সত্ত্বেও বনোবাসকালে পাণ্ডবদের বিভিন্ন কাজ করতে হয়েছিল। পাণ্ডবদের বনের নির্বাসিত জীবনযাপন আমাদের তা শিখিয়েছে। এই জন্য সব কাজে দক্ষ হওয়া ভালো।

৯.নির্দিষ্ট পরিকল্পনা : পাণ্ডবরা সবসময় ধর্মের পথে চলতো এজন্য কৃষ্ণ পাণ্ডবদের সঙ্গে ছিল। এবং পাণ্ডবরা কৃষ্ণএর পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতো।  পাণ্ডবরা যদি  তার পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ না করতো তাহলে যুদ্ধে জয়ী হতে পারতো না। তাই, যেকোনো কাজ করার পূর্বে আমাদের অবশ্যই  পরিকল্পনা করে করতে হবে ।

অন্ধ ভালোবাসা : পিতামাতা অবশ্যই সন্তাদের ভালোবাসবেন এবং তাদের ভালো কিছু দিতে চাইবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেটা ন্যায় অন্যায় বিবেচনা করে। যে যেটার যোগ্য তাকে সেটাই দিতে হবে। মহাভারতে ধৃতরাষ্ট্র তার পুত্রকে অন্ধভাবে ভালোবাসতেন। তাই দুর্যোধন যেটার যোগ্য না পুত্র চাইতো বলেই তিনি পুত্রকে হিনহাসনে বসাতে চাইতেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *