মা কালীর নয়টি রূপ

মা কালী  হলেন  শ্যামা বা আদ্যাশক্তি। তন্ত্র অনুসারে মা কালী দশমহাবিদ্যা-র প্রথম দেবী।  

তন্ত্র পুরাণে দেবী কালীর একাধিক রূপের উল্লেখ পাওয়া যায়। তোড়লতন্ত্র অনুসারে, মা কালীর নয়টি রুপ।  আজ আপনাদেরকে জানাবো মা কালীর নয়টি রূপ সম্পর্কে। 

১. দক্ষিণাকালী

মা কালীর  দক্ষিণাকালীর সব রূপের মধ্যে বিগ্রহই সর্বাধিক পরিচিত ও পূজিত।দক্ষিণাকালী চতুর্ভূজা। তার  হাতে রয়েছে অসুরের ছিন্ন মুণ্ড খড়্গ ও অভয়মুদ্রা। নরমুণ্ডের মালা দেবীর গলায় রয়েছে । কালো তার গায়ের রং। তিনি পা আগে রেখে দণ্ডায়মান শিবের বুকে ডান এবং মাথায় চুল আলুলায়িত।

মা দক্ষিণাকালী শ্যামাকালী নামেও পরিচিত।

২. শ্মশানকালী

 শাস্ত্র মতে দেবী কালিকা ব্রহ্মময়ী। তিনি নিরাকার ও সাকারও উভয় রূপেই অবস্থান করেন। 

শ্মশানকালী দেবীর গায়ের রং কাজলের মতো কালো, চোখদুটি রক্তপিঙ্গল বর্ণের, ও চুলগুলি আলুলায়িত। 

মা কালীর “শ্মশানকালী” রূপটির পূজা সাধারণত শ্মশানঘাটে হয়ে থাকে।  শ্মশানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী মনে করা হয় এই দেবীকে।গৃহস্থবাড়িতে  শ্মশানকালীর পূজা হয় না। 

৩. গুহ্যকালী

গুহ্যকালী কালীর এক অতি ভয়ংকরী রূপ।  গুহ্যকালী দ্বিভূজা, সর্পভূষিতা ও খড়্গহস্তা। তাকে সূর্যকালী নামেও অভিহিত করা হয়।

দেবীভাগবত পুরাণ মতে, তিনি দেবী শতাক্ষীর শরীর থেকে উৎপন্না অন্যতমা মহাশক্তি।

গুহ্যকালীর গাত্রবর্ণ গাঢ় মেঘের ন্যায়, তিনি লোলজিহ্বা ও দ্বিভূজা,  কটিতে ক্ষুদ্র কৃষ্ণবস্ত্র, স্কন্ধে নাগযজ্ঞোপবীত, মস্তকে জটা ও অর্ধচন্দ্র এবং  গলায় পঞ্চাশটি নরমুণ্ডের মালা থাকে।

গুহ্যকালীর পূজো গৃহস্থ বাড়িতে হয় না। সাধকরাই কেবল গুহ্যকালীর পূজা করে।

বীরভূম জেলার আকালীপুর গ্রামে ব্রাহ্মণী নদীর তীরে একটি গুহ্যকালী মন্দির আছে।

৪. সিদ্ধকালী

সিদ্ধকালী মা কালীর একটি  রূপ। কালীতন্ত্র-এ তাকে দ্বিভূজা রূপে কল্পনা করা হয়েছে। তিনি ব্রহ্মরূপা ভুবনেশ্বরী।দেবী ত্রিনয়নী , মুক্তকেশী , দিগম্বরা ।

 তার দক্ষিণের হস্তে আছে খড়্গের আঘাতে চন্দ্রমণ্ডল থেকে নিঃসৃত অমৃত রস।

সেই চন্দ্র মণ্ডলের গলিত রস দেবীর সর্বাঙ্গ প্লাবিত করছে । তিনি বাম হস্তের কপাল পাত্রে ঐ অমৃত ধারন করে পান করছেন । 

গৃহস্থের বাড়িতে সাধারণত সিদ্ধকালীর পূজা হয় না, সিদ্ধকালীর পূজা মূলত সাধকরা করে।

৫. মহাকালী

মা কালী মহাকালী  রূপে  দশ মহাবিদ্যা বা “মহাজ্ঞান” এর প্রতিনিধিত্ব করেন। 

তন্ত্রসার গ্রন্থ অনুসারে মহাকালী পঞ্চদশ নয়না , মহারৌদ্রী । 

শ্রীশ্রী চণ্ডী মহাকালীকে আদ্যাশক্তি,  দশভূজা, ও ত্রিংশল্লোচনা রূপে কল্পনা করা হয়েছে।তার দশ হাতে রয়েছে যথাক্রমে ,গদা,খড়্গ,চক্র ধনুক,বাণ,পরিঘ,শূল,ভূসুণ্ডি,নরমুণ্ড ও শঙ্খ। 

মা কালীর নয়টি রূপ

কেবল সাধকরাই মহাকালীর পূজা করেন। সাধনপর্বে তিনি  সাধককে নানা ভাবে ভীতি প্রদর্শন করেন। সাধক ভয় তুচ্ছ করে সাধনায় সফল হলে তিনি  সিদ্ধি দান করেন । 

৬. ভদ্রকালী

ভদ্রকালী মহাশক্তির একটি বিশেষ রূপ।

কালিকাপুরাণ ও দেবীপুরাণ অনুসারেও, ভদ্রকালী দুর্গারই রূপান্তর।

 কালিকাপুরাণ মতে, ভদ্রকালীর গাত্রবর্ণ অতসীপুষ্পের ন্যায়, মাথায় জটাজুট, ললাটে অর্ধচন্দ্র ও গলদেশে কণ্ঠহার।  তিনি মসীর ন্যায় কৃষ্ণবর্ণা, কোটরাক্ষী, সর্বদা ক্ষুধিতা, মুক্তকেশী এবং কর্ণে উজ্জ্বল কুন্ডল থাকে তার।

দেবী পুরাণ অনুসারে দেবী অন্তিমে মৃত্যুকালে ভদ্র বা মঙ্গল বিধান করেন , তাই তিনি ভদ্রকালী ।

৭. আদ্যাকালী

মহানির্বাণ তন্ত্রে আদ্যাকালীর উল্লেখ পাওয়া যায়। এই দেবীর রং মেঘের মতো ঘন নীল, কপালে চন্দ্ররেখা,ত্রিনেত্রা, রক্তবস্ত্র পরিহিতা। প্রস্ফুটিত রক্তপদ্মে দেবীর  আসন।

আদ্যাকালীর পূজো গৃহস্থ ও সাধক সবাই করতে পারেন । 

৮. চামুণ্ডাকালী

চামুণ্ডাকালী মা কালীর একটি প্রসিদ্ধ রূপ।

 দেবীভাগবত পুরাণ ও মার্কণ্ডেয় পুরাণ-এর বর্ণনা অনুযায়ী,  চণ্ড ও মুণ্ড নামক দুই অসুর বধের জন্য দেবী দুর্গার ভ্রুকুটিকুটিল ললাট থেকে উৎপন্ন হন চামুণ্ডাকালীর। 

তার গায়ের বর্ণ নীল পদ্মের ন্যায়, হাতে অস্ত্র, দণ্ড ও চন্দ্রহাস ও ব্যাঘ্রচর্ম পরিহিতা।

দুর্গাপূজায় মহাষ্টমী ও মহানবমীর সন্ধিক্ষণে আয়োজিত সন্ধিপূজার সময় দেবী চামুণ্ডার পূজা করা হয়। 

৯. কৃষ্ণকালী

সম্মিলিত কৃষ্ণ কালী হলেন কৃষ্ণ ও কালীর রূপ। শাক্ত ও ইনি বৈষ্ণব উভয় সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ কাছেই বিশেষ। 

কৃষ্ণকালী চতুর্ভুজা কৃষ্ণবর্ণা চূড়ামুকুট মণ্ডিতা। দক্ষিণহস্তে শঙ্খ ও খর্পর ধারিণী তিনি।এবং বাম হস্তে ধারণ করে আছেন খড়্গ ও চক্র। 

 যে যে স্থানে এই দেবীর মন্দির আছে সেখানে নিত্য পূজাও হয়। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *