শিব পুরাণ অনুযায়ী দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের নাম ও অবস্থান

জ্যোতির্লিঙ্গ হলো শিবের বারোটি বিশেষ মন্দির ও সেই মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত শিবলিঙ্গগুলি। এই বারোটি  মন্দির ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে। 

অরিদ্রা নক্ষত্রের রাতে মহাদেব স্বয়ং জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে আর্বিভূত হয়েছিলেন।

শিব পুরাণ অনুযায়ী দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ সম্পর্কে।    

১ সোমনাথ মন্দির, 

গুজরাটের সোমনাথ মন্দির শিবশক্তির জ্যোর্তিলিঙ্গগুলির মধ্যে অন্যতম  মন্দির। এই সোমনাথ মন্দির পাঁচ বার ধ্বংসপ্রাপ্ত ও ছয় বার পুনর্নির্মিত হয়েছে।

গুজরাটের এই মন্দিরের কাছেই পরোশুরামের মন্দির, শঙ্করাচার্যের মন্দির,ও সারদা মঠ রয়েছে।

সোমনাথ মন্দিরের এই শিবলিঙ্গের উল্লেখ স্কন্দপূরাণেও আছে।এই মন্দিরের দরজা রূপোর চাদরে মোড়া এবং গর্ভগৃহের মাঝখানে রয়েছে এই বিশাল শিবলিঙ্গ৷ 

২. মল্লিকার্জুন মন্দির

 মল্লিকার্জুন বা শ্রীশৈলম মন্দির অন্ধ্রপ্রদেশে হায়দারাবাদ থেকে ২১২ কিমি দূরে কুর্নুল জেলায় আটমাকুরে নাল্লাপর্বতে অবস্থিত। 

এই মন্দিরে  অবস্থান করে মল্লিকার্জুন শিব এবং তার ভৈরব ভ্রমরাম্বা৷ মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কৃষ্ণা নদী৷ এটি শিবের পবিত্রতম বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরের মধ্যে অন্যতম মন্দির। এই মন্দিরের শিবলিঙ্গ ২৫-৩০সেন্টিমিটার উঁচু।এই শিবলিঙ্গে আছে রূপোর নাগরাজ৷

৩ মহাকালেশ্বর মন্দির

মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীতে শিপ্রা নদীর তীরে এই মহাকালেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরটি অবস্থিত। 

 এখানে মাটির নীচে আছে মূল মন্দিরটি, এবং  তার ওপরে আছেন ওংকারেশ্বর শিব। এখানের শিব লিঙ্গের উচ্চতা প্রায় আড়াই ফুট৷ কথিত আছে, দুশন নামের এক রাক্ষসের হাত থেকে উজ্জয়িনীবাসীদের মুক্তি দেওয়ার পর থেকেই এখানে শিবকে  মহাকালেশ্বর রূপে পুজা করা হয়। আবার এটাও কথিত আছে যে, শ্রীরামচন্দ্র সব তীর্থের জল এনে তার পিতার পিন্ড দান করেছিলেন এই মহাকালে।

 ৪. ওঁকারেশ্বর মন্দির

মধ্যপ্রদেশে ইন্দোর স্টেশন থেকে ৭৮ কিলোমিটার দূরে নর্মদা নদীর একটি দ্বীপে ওঙ্কারেশ্বর

জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরটি অবস্থিত। পাঁচতলা এই মন্দিরের গর্ভগৃহে আছে ছোট্ট এই শিবলিঙ্গ৷

মন্দিরটি  অনেক বিখ্যাত মধ্যপ্রদেশের ওমকারেশ্বর। এটা মনে করা হয় যে, শিব পূজার জন্য এই মন্দিরটি স্থাপন করেন রাজা মান্ধাতা।

৫ কেদারনাথ মন্দির

 সর্ব-উত্তরে উত্তরাখণ্ডে ১১,৭৫৩ ফুট উঁচুতে বরফে ঢাকা কেদার পাহাড়ে মন্দাকিনী নদীরতীরে এই জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরটি অবস্থিত। এই মন্দিরে যেতে হলে পায়ে হেঁটে যেতে হয়। বছরের মধ্যে ছয় মাসই বন্ধ থাকে এই মন্দির।কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পর  পান্ডবরা নিজেদের জ্ঞাতিবধজনিত পাপ স্খলন করার জন্য কেদারনাথের এই জ্যোর্তিলিঙ্গে শিব পূজা করেন।

 ৬ ভীমশঙ্কর মন্দির

ভীমশঙ্কর জ্যোতির্লিঙ্গ ঠিক কোথায় তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।ভীম নদীর তীরে  মহারাষ্ট্রের পুনের কাছে এই ভীমশঙ্কর মন্দিরটি অবস্থিত।ঘন গ্রানাইট পাথরের তৈরি বিশাল এই মন্দিরটি।কথিত আছে, ভীম নামের এক দানবকে বধ করে ভক্তদের রক্ষা করেন শিব। তারপর পুনের এই মন্দিরের জ্যোর্তিলিঙ্গ গড়ে ওঠে  শিবের আরাধনার জন্য। 

৭ বিশ্বনাথ মন্দির

উত্তর প্রদেশের বারাণসীর কাশী বিশ্বনাথ মন্দির হল সপ্তম জ্যোর্তিলিঙ্গ। বেনারসের গঙ্গার তীরে দশ্বাশ্বমেধ ঘাট থেকে মাত্র কয়েক মিনিট পথ পেরোলেই এই মন্দিরটি। এই শিবলিঙ্গটি মাঋারি আকারের।এই জ্যোর্তিলিঙ্গের প্রতি ভক্তদের প্রবল বিশ্বাস ও  আস্থা।

৮ ত্র্যম্বকেশ্বর মন্দির

ত্র্যম্বকেশ্বর মন্দিরটি মহারাষ্ট্রের  গোদাবরী নদীর উৎসের কাছে অবস্থিত। এই শিবলিঙ্গটি তিন ভাগে বিভক্ত এবং অন্য শিবলিঙ্গের চেয়ে আলাদা৷ ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শিবের সমন্বয়ে এই মূর্তিটি অবস্থিত। ১২ বছর পর পর এখানে পূর্ণকুম্ভ অনুষ্ঠিত হয়।শোনা যায় স্ত্রী অহল্যাকে নিয়ে মহারাষ্ট্রের গৌতম মুণি এই স্থানে বাস করতেন । এখানে একটি বিশেষ পাথর খচিত মুকুটও আছে , যা দেখতে ভক্তরা ভিড় করেন।

৯ বৈদ্যনাথ মন্দির

বৈদ্যনাথ মন্দির ঝাড়খণ্ডে অবস্থিত। বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের অবস্থান নিয়েও বিতর্ক আছে।  বৈদ্যনাথ মন্দিরই একমাত্র তীর্থ যা একাধারে জ্যোতির্লিঙ্গ ও শক্তিপীঠ।

পৌরাণিক কাহিনী ঝাড়খন্ডের ঘিরেও রয়েছে এই বৈদ্যনাথ মন্দির। রাবণ একবার  উপাসনায় শিবকে খুশি করেন । একটি জ্যোতির্লিঙ্গ পান রাবণ তখন  শিবের কাছ থেকে। শিব বলেন যে, এই লিঙ্গ লঙ্কা যাওয়ার আগে  কোথাও  রাখা যাবে না। এই জ্যোতির্লিঙ্গটি যেখানে রাখা হবে সেখানেই এটি প্রতিষ্ঠিত হবে। লঙ্কা ফেরার পথে রাবণ এই জ্যোতির্লিঙ্গকে একটি ছোট বালকের হাতে দিয়ে , তা  রাখতে বলেন। তখন সেই বালক লিঙ্গটি ভূমিতে রেখে দেন, আর সেখানেই প্রতিষ্ঠিত হয় এই শিব মন্দিরটি। আসলে সেই বালকটি ছিল শিবপুত্র গণেশ। যে জায়গায় সেই জ্যোর্তিলিঙ্গ রাখা হয়েছিল, সেই স্থান ছিল ঝাড়খণ্ডে ,এবং সেখানেই মন্দিরটি গড়ে উঠেছে।

১০ নাগেশ্বর মন্দির

আরব সাগরের তীরে গুজরাটের  দ্বারকায় নাগেশ্বর মন্দির অবস্থিত। 

যদিও এই জ্যোতির্লিঙ্গের অবস্থানও বিতর্কিত। এই জ্যোতির্লিঙ্গের  দাবিদার মন্দিরগুলি হলো, উত্তরাখণ্ডের আলমোড়ার কাছে জাগেশ্বর ও মহারাষ্ট্রের হিঙ্গোলি জেলার অন্ধ নাগনাথে অবস্থিত মন্দির। কথিত আছে, দৌরাকা রাক্ষসের হাত থেকে ভক্তকে রক্ষা করার পর শিবের মহিমার আরাধনায় স্থাপিত হয়েছিল এই নাগেশ্বর মন্দির।

১১ রামেশ্বরম মন্দির

তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমে সমুদ্র তীরের কাছে এই জ্যোতির্লিঙ্গ অবস্থিত। শ্রীরামেশ্বরম চার ধামের এক ধাম। এখানে  দুটি শিব লিঙ্গ রয়েছে।কথিত আছে, একটি শিব লিঙ্গ পুজা করতেন সীতা, এবং অন্যটি হনুমান দ্বারা পুজিত হত। রাবণকে পরাজিত করে,  এখানে এসেই শিবের আরাধনা করেন রাম এবং তখন  থেকেই রামেশ্বরমে শিবের দুটি জ্যোর্তিলিঙ্গ স্থাপিত আছে।

১২ ঘৃৃষ্ণেশ্বর মন্দির

 মহারাষ্ট্রের ইলোরার কাছে, ঔরঙ্গাবাদ জেলায় ঘৃৃষ্ণেশ্বর মন্দিরটি অবস্থিত।এই মন্দিরকে কুসুমেশ্বর মন্দিরও বলা হয়ে থাকে।পাহাড় এবং জঙ্গল ঘেরা টোপর আকৃতির এই মন্দিরে আছে ছোট্ট জ্যোর্তিলিঙ্গটি৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *