কোণার্ক সূর্য মন্দিরের রহস্য

কোণার্ক সূর্য মন্দির ভারতের ওড়িশা রাজ্যের  কোণার্ক শহরে অবস্থিত। এই সূর্য মন্দিরটি ১২৫৫ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব গঙ্গ রাজবংশের প্রথম নরসিংহদেব নির্মাণ করেছিলেন। মন্দিরটি একটি  রথের আকৃতিতে তৈরি করা হয়েছে।

সৌর দেবতা সূর্যকে উৎসর্গ করা হয়েছিল এই মন্দিরটি এবংএঅবস্থানের গুরুত্বপূর্ণ অর্থ বহন করে ই মন্দিরটি সূর্যের বিভিন্ন। এই সূর্যমন্দিরকে ঘিরে রয়েছে অনেক রহস্য।আজ আাপনাদের জানাবো কোণার্ক সূর্য মন্দিরের রহস্যময় বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কে।

কোণার্ক সূর্য মন্দিরকে ইউরোপীয় নাবিকরা ব্ল্যাক প্যাগোডা এবং পুরীর জগন্নাথ মন্দিরকে হোয়াইট প্যাগোডা  নামে  অভিহিত করত। এই মন্দিরটি গড়ে ওঠার পেছনে দুটি মত আছে। প্রথমত, পূর্বগঙ্গ রাজবংশের প্রথম নরসিংহদেববাংলা জয়ের স্মারকরূপে চন্দ্রভাগা নদীর তীরে প্রাচীন মিত্রাবনে এই সূর্যমন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। 

দ্বিতীয়ত, পুরাণ মতে শ্রীকৃষ্ণের পুত্র শাম্‍ব ‌ছিলেন অত্যন্ত নয়নভোলানো।শাম্‍ব একদিন নারদের ডাকে সাড়া দিতে ভুলে গিয়েছিল, এজন্য নারদের মনে প্রতিরোধ স্পৃহা জাগে। একদিন কৃষ্ণ গোপিনীদের সঙ্গে লীলায় ব্যস্ত ছিলেন তখন নারদের মন্ত্রনায় শাম্‍ব সেখানে যায়। তখন কৃষ্ণ প্রচুর রেগে গিয়ে শাম্বকে  অভিশাপ দানের প্রয়োজনে শাস্তি দেন যে তার রূপ হারিয়ে যাবে।

শাম্ব তখন সূর্যদেবকে কঠোর তপস্যায় মুগ্ধ করে নিজের হারানো রূপ ফিরে পায় মনের দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে সমুদ্রের তীরে এসেএবং  সমুদ্রতীরে এই সূর্যমন্দির প্রতিষ্ঠা করে।কলিঙ্গ রীতিতে নির্মিত এই মন্দিরের চূড়াগুলো পিরামিড আকৃতির। মন্দিরের সামনে নাটমন্ডপ আছে । ভোগমন্দির এবং গর্ভগৃহ এছাড়াও  মন্দিরের ভিতরে রয়েছে নাটমন্দির,। এই মন্দিরটির উচ্চতা প্রায় ৮৫৭ ফুট। তবে মন্দিরের অনেক অংশ এখন বালির নিচে চাপা পড়ে আছে।

 মন্দিরটি ধূসর বেলেপাথরে বিশাল একটি রথের আকারে গড়া হয়েছে।মনে হয় যেন সমুদ্র থেকে উঠে আসা সূর্যদেবের বিশাল রথ, সাত জোড়া ঘোড়া তার সামনে রয়েছে । মানে সপ্তাহের সাত দিন এই সাতটি ঘোড়া । পুরো মন্দিরটি বারো জোড়া বিশাল চাকার ওপর নির্মিত।এই অর্থ চব্বিশ পক্ষ চব্বিশটি চাকার।

 প্রতিটি চাকাই একেকটি সূর্যঘড়ি। চাকার ভেতরের দাঁড়গুলো সূর্য ঘড়ির সময়ের কাঁটা এবং আটটি দাড়ি মানে অষ্টপ্রহর। এখনো এই সূর্যঘড়ির সাহায্যে নিখুঁতভাবে সময় জানা যায় । এই মন্দিরের চূড়ায় একটি ৫২ টন ওজনের চুম্বক  ছিলো।পর্তুগীজ জলদস্যুদের দস্যুবৃত্তি করতে অসুবিধা হত এবং পর্তুগালের ব্যাপারী জাহাজগুলো এই মন্দিরের পাস দিয়ে গেলেই এই জাহাজের কম্পাসগুলো ভুল দিক নির্দেশ করত চুম্বকের আকর্ষণে। যার কারণে জাহাজগুলো ভুল দিকে চলে যেত ও জাহাজগুলো ডুবে যেত প্রাকৃতিক দূর্যোগের কবলে পড়ে।

যখন এই মন্দিরের চুম্বকটির কথা সবার সামনে প্রকাশিত হয়। তখন পর্তুগালের নাবিকরা এই মন্দিরটিকে ব্ল্যাক প্যাগোডা বলতে শুরু করে। পরবর্তীতে পর্তুগীজরা কোনার্ক মন্দিরের মাথায় অবস্হিত শক্তিশালি চুম্বকটিকে খুলে ফেলে।এই মন্দিরের আরো একটি রহস্য হলো আজ পর্যন্ত এই মন্দিরে কোনোদিন পূজা হয়নিদেবতার। বলা হয়ে থাকে এই মন্দিরের প্রধান বাস্তুকারের পুত্র এই মন্দিরটির উদ্বোধনের আগের দিন, মন্দিরের ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। কারণ 

রাজা আদেশ দিয়েছিলেন, এই মন্দিরটি নির্মাণ করার জন্য ১০ হাজার কারিগরই কাজ করবে।রাজা একটি নির্দিষ্ট সময় ও দিয়েছিলেন। তবে এই সময়ের মধ্যে যখন মন্দিরের চূড়াটিকে অনেক চেষ্টার পরেও বাস্তুকার সঠিক স্থানে বসাতে পারছিলেন না,  তখন বাস্তুকারের পুত্র এই চূড়াটি যথাস্থানে বসানোর দায়িত্ব নেয়।

সে সঠিক সময়ের মধ্যে এই সঠিক স্থানে স্থাপন চূড়াটি করেন। বাস্তুকারের পুত্র এই ভেবে ভীত হয়ে পড়ে যে যদি রাজা জানতে পারে বরং আরো একটি কারিগর বেশি কাজ করেছে তখন হয়তো রাজা রেগে গিয়ে সমস্ত শ্রমিককে মৃত্যুদণ্ড দেবে এই মন্দির নির্মাণ করতে ১০ হাজার কারিগর নয়। তখন এই ১০ হাজার শ্রমিকের প্রাণ বাঁচানোর জন্য বাস্তুকারের পুত্র মন্দিরের চূড়া থেকে ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যুবরণ করে। এর ফলে মন্দির অপবিত্র হয়ে যায় এবং এই মন্দিরে কোন পূজা হয় না।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *