হিন্দুধর্মীয় পবিত্র ১০ টি তীর্থস্থান

হিন্দু ধর্মের সারা ভারত জুরে রয়েছে অনেক পবিত্র তীর্থস্থান।সারা বছর এই সকল তীর্থস্থানে ভীড় জমায়।বিভিন্ন দুর-দুরান্ত থেকে আসা অসংখ্য তীর্থযাত্রীরা।আজ আপনাদের জানাবো এমন ১০ টি পবিত্র তীর্থস্থান সম্পর্কে।

১. পুরী

ওড়িশা রাজ্যের পুরী ভারতের সেখানে শহর একটি পুরী জেলা।

বঙ্গোপসাগরের তীরে এবং সদর শহর অবস্থিত শহর পুরী রাজধানী ভুবনেশ্বর থেকে অবস্থিত ৬০ কিমি দূরে।হিন্দুদের চারধামের অন্যতম একটি ধাম হিসেবে পুরী শ্রীক্ষেত্র ও নীলাচল নামে পরিচিত ছিল।

এই শহরে অনেক মঠ ও মন্দির আছে হিন্দুদের।এই শহরের ধর্মীয় গুরুত্বতার ৮০% উপর নির্ভর করে অর্থনীতি জগন্নাথ মন্দিরের।প্রতি বছর রথযাত্রা উপলক্ষে লক্ষ লক্ষ মানুষ এখানে আসে।  

২. রামেশ্বারম

দক্ষিণ ভাগের প্রান্তিক স্থান ভারতের রামেশ্বরাম।ভারতের তামিলনাড়ুর জেলার শহর একটি রামনাথাপুরাম।উপরিভাগে মাননার উপসাগরে ভারতীয় উপদ্বীপের অবস্থিত সাথে একত্রিত হয়ে এটি।

হিন্দুদের কাছে ভারতের পবিত্রতম স্থান এবং চার ধাম তীর্থযাত্রার অংশ বলে মনে করা হয়।ভারতের রামেশ্বর শ্রীলঙ্কায় কাছ থেকে পৌঁছানোর সবচেয়ে নিকটতম বিন্দু এবং  প্রমাণগুলি ভূতাত্ত্বিক নির্দেশ করে যে, ভারত শ্রীলঙ্কায় মধ্যে পূর্ব জমির রামসেতু সংযোগ ছিল।রামেশ্বর স্তম্ভ এই মন্দিরে অবস্থিত।

৩. দ্বারকা

ভারতের গুজরাত রাজ্যের দেবভূমি দ্বারকা জেলায় অবস্থিত দ্বারকা হলো একটি প্রাচীন শহর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে চারধাম নামে পরিচিত প্রধান তীর্থস্থানের একটি হল চার দ্বারকা।আবার সপ্তপুরী নামে পরিচিত ভারতের সাতটি প্রাচীনতম শহরের অন্যতম হল দ্বারকা। হিন্দুশাস্ত্রে দ্বারকাকে বলা হয়েছে কৃষ্ণের রাজধানী।গুজরাতের প্রথম এটিই ছিল রাজধানী মনে করা হয়।দ্বারকাধীশ বা দ্বারকেশ্বর কৃষ্ণের অপর নাম। খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ বা সপ্তম শতাব্দীতে নির্মিত হয় দ্বারকাধীশ মন্দির

৪.হিমালয়ের  চার ধাম

হিমালয়ের  চার ধাম হল কেদারনাথ মন্দির,বদ্রীনাথ মন্দির,গঙ্গোত্রী,ও যমুনোত্রি কেদারনাথ মন্দির হিন্দুদের অন্যতম প্রধান তীর্থস্থান।এটি ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের গাড়োয়াল হিমালয় পর্বতশ্রেণীতে অবস্থিত কেদারনাথ শহরে মন্দাকিনী নদীর তীরে স্থাপিত একটি শিব মন্দির।তীব্র শীতের জন্য মন্দিরটি অবধি খোলা থাকে কেবল এপ্রিল মাসের শেষ থেকে কার্তিক পূর্ণিমা। শীতকালে কেদারনাথ মন্দিরের মূর্তিগুলিকে ছয় মাসের জন্য উখিমঠে নিয়ে গিয়ে পূজা করা হয়। ভারতের  রাজ্যের উত্তরাখণ্ড  শহরে বদ্রীনাথ অবস্থিত একটি হিন্দু মন্দির বদ্রীনাথ মন্দির।

বদ্রীনারায়ণ মন্দির এই মন্দিরের অপর নাম।

তীর্থগুলির এটি হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর মন্দির ।বদ্রীনারায়ণ মন্দির ও বদ্রীনাথ শহর  অন্যতম চারধামছোটো চারধাম নামে পরিচিত।

একটি বৈষ্ণব ১০৮টি তীর্থেরও‘দিব্য দেশম’ নামে পরিচিত বদ্রীনাথ মন্দির।প্রতি বছর এপ্রিল মাসের শেষভাগ থেকে নভেম্বর মাসের প্রথম ভাগ পর্যন্ত ছয় মাস এই মন্দিরটি খোলা থাকে এই মন্দিরের প্রধান’ নামে দেবতা বিষ্ণু ‘বদ্রীনারায়ণ পূজিত হন।বিগ্রহটি কষ্টিপাথরে বদ্রীনারায়ণের  নির্মিত।

ভারতের গঙ্গোত্রী উত্তরাখণ্ড রাজ্যের উত্তরকাশী জেলার একটি শহর এটি অবস্থিত ভাগীরথী নদীর তীরে একটি হিন্দু তীর্থ শহর। গঙ্গোত্রী হিমাদ্রি হিমালয় পর্বতশ্রেণীতে ৩,১০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। গঙ্গোত্রী গঙ্গা নদীর উৎসস্থলতাই এখানে দেবী গঙ্গার একটি মন্দির আছে। তীর্থ-চতুষ্টয়ের একটি গঙ্গোত্রী ছোট চার ধাম ।

যমুনোত্রি হলেন যমুনা নদীর উত্স এবং হিন্দু ধর্মে আসন যমুনা দেবীর।এটি ভারতের ছোট চর ধম চারটি তীর্থযাত্রার সাইটের মধ্যে একটি। এটি বান্দর পুঞ্চ পার্বতের এক প্রান্তে অবস্থিত। যমুনোত্রির প্রধান আকর্ষণ হ’ল যমুনা দেবীকে উত্সর্গ করা মন্দির

৫. কুম্ভ মেলা

ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা এই উপলক্ষে তীর্থস্নান করতে আসেন।হিন্দু উৎসব কুম্ভমেলা।শান্তিপূর্ণ হিসাবে বিশ্বের বৃহত্তম সমাবেশ এখানে ১০ কোটীর বেশি ২০১৩ সালে আগমন ঘটে মানুষের। সাধারণ কুম্ভমেলা প্রতি চার বছর অন্তর আয়োজিত হয়।

হরিদ্বার ও প্রয়াগেঅর্ধকুম্ভ আয়োজিত হয় প্রতি ছয় বছর ।প্রতি বারো বছর অন্তর প্রয়াগ, হরিদ্বার, আয়োজিত হয় উজ্জ্বয়িনীনাসিকে পূর্ণকুম্ভ। প্রতি ১৪৪ বছর অর্থাৎ বারোটি পূর্ণকুম্ভ অন্তর প্রয়াগে আয়োজিত হয় মহাকুম্ভ।

৬. বারাণসী

বারাণসী হল ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের বারাণসী জেলার একটি শহর। শহরটি স্থানীয়ভাবে বেনারস নামে এবং কাশীনামে অধিক বাঙালিদের কাছে পরিচিত।শহরটি গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত।হিন্দুধর্মের সাতটি পবিত্রতম শহরের একটি হল বারাণসী হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, বারাণসীতে মৃত্যু হলে মৃত ব্যক্তি মোক্ষ লাভ করেন বারাণসী ভারত তথা বিশ্বের প্রাচীনতম শহরগুলির অন্যতম।

৭. প্রয়াগরাজ

ভারতের উত্তর প্রদেশের মহানগর প্রয়াগরাজ বা এলাহাবাদ।

এই শহরেরই যমুনা ও গঙ্গা নদী মিলিত হয়েছে।পৌরাণিক ত্রিবেণী সঙ্গম অর্থাৎ গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী নদীর মিলনস্থান এলাহাবাদ একটি পরিচিত তীর্থস্থান।

৮. হরিদ্বার-ঋষিকেশ

হরিদ্বার বা হরদ্বার বলা হয় ভারতের উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বার জেলার একটি প্রাচীন শহর ।এখানেই দেবী গঙ্গা ভগবান শিবের চুল থেকে মুক্তি পেয়ে পৃথিবীতে নেমেছিলেন।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের  সাতটি পবিত্রতম সপ্ত পুরী নামে পরিচিত স্থানের একটি বিবেচনা করা হয় হিসাবে হরিদ্বার বা হরদ্বারকে।

সমুদ্র মন্থন অনুসারেসহ হরিদ্বার এমন চারটি স্থানের মধ্যে একটি যেখানে অমৃতের বিন্দু,পড়েছিল।মহাজাগতিক পাখি গরুড় অমৃতের কলস বহন করার সময় দুর্ঘটনাক্রমে অমৃত ছড়িয়ে পড়েছিল। এটি কুম্ভমেলায় অভিব্যক্ত হয়েছে, যা প্রতি ১২ বছরে একবার হরিদ্বারে পালিত হয়।লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী, ভক্ত এবং পর্যটকরা মোক্ষ অর্জনের জন্য হরিদ্বারে জমায়েত হয় হরিদ্বার কুম্ভ মেলা চলাকালীন গঙ্গা নদীর তীরে ধর্মীয় স্নান করতে।

৯. মথুরার-বৃন্দাবন

বৃন্দাবন একটি প্রাচীন শহর।

ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত একটি হিন্দুধর্মের গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান এই শহর হিন্দু।

মন্দিরগুলির একটি হল এই শহরের প্রাচীনতম গোবিন্দদেব মন্দির। 

ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের বৃন্দাবন হল মথুরা একটি শহর জেলার অন্তর্গত। এখানে নিজেদের সচ্চিদানন্দ ছেলেবেলার লীলা ঈশ্বর পরম রাধামাধব প্রকাশ করে থাকেন।বৃন্দাবন শহরে রাধা ও কৃষ্ণের মন্দির আছে অনেকগুলি। হিন্দু ধর্মের বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের কাছে এটি পবিত্র তীর্থস্থান একটি।

১০.সোমনাথ মন্দির

একটি প্রসিদ্ধ শিব মন্দির সোমনাথ মন্দির ভারতের

পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত গুজরাট প্রভাস ক্ষেত্রে এই মন্দির অবস্থিতরাজ্যের সৌরাষ্ট্র অঞ্চলের বেরাবলের নিকটস্থ।চিরন্তন পীঠ নামে পরিচিত সোমনাথ মন্দিরটি।কারণ অতীতে হলেও মন্দিরটি সত্বর পুনর্নিমিত হয় ছয় বার ধ্বংসপ্রাপ্ত।

হিন্দু পুরাণ অনুসারে, দক্ষ প্রজাপতি কর্তৃক অভিশপ্ত হয়ে চন্দ্র প্রভাস তীর্থে শিবের আরাধনা করলে, শিব তাঁর অভিশাপ  নির্মূল করেন।

এই কারণে একটি স্বর্ণমন্দির নির্মাণ করেন চন্দ্র সোমনাথে শিবের।

রাবণ পরে রৌপ্য ও মন্দিরটি পুনর্নিমাণ করেছিলেন কৃষ্ণ চন্দনকাষ্ঠ দ্বারা বলে বিশ্বাস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *