আমরা অনেক সতী নারী সম্পর্কেই জানি।যেমন বেহুলা তার সতীত্বের জোরেই লক্ষ্মীন্দর এর প্রাণ ফিরিয়ে এনেছিলেন। আবার সাবিত্রী ও যমরাজের কাছ থেকে তার সতীত্বের দ্বারাই সত্যবান এর প্রাণ ফিরিয়ে এনেছিলেন। আজ আপনাদের জানাবো এমন এক সতী নারী সম্পর্কে যিনি ত্রিদেব অর্থাৎ ব্রহ্মা বিষ্ণু এবং মহাদেব কেও মাতৃস্নেহ দিয়েছিলেন।
অত্রি নামে এক ঋষির স্ত্রী ছিলেন অনুসুয়া। ঋষি কর্দম ও দেবাহুতির দ্বিতীয় কন্যা ছিলেন এই অনসূয়া।
রামায়ণের বর্ণনা থেকে পাওয়া যায়, অনুসূয়া তার স্বামীর সাথে চিত্রকোট বনের একটি আশ্রমে বাস করতেন। তিনি অত্যন্ত ধার্মিক ছিলেন এবং তিনি অলৌকিক ক্ষমতাও অর্জন করেছিলেন। অনসূয়া মন্দাকিনী নদীকে পৃথিবীতে নামিয়ে এনেছিলেন।
কারণ এক সময় চিত্রকূটে দশ বছর যাবৎ বৃষ্টি হয়নি। সেখানে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল, এবং প্রাণী ও পাখিদের ক্ষুধা ও তৃষ্ণা মেটানোর মত কিছুই আর অবশিষ্ট ছিলনা। তখন সতী অনসূয়া কঠোর ও নিবিড় তপস্যা করেন এবং মন্দাকিনী নদীকে পৃথিবীতে নামিয়ে আনেন যার ফলে জলধারায় বনভূমি পুনর্জীবিত হয়েছিল এবং সকল ঋষি ও প্রাণীজগতের দুর্গতি নিবারণ হয়েছিল।
অনসূয়ার বর্ণনা ভাগবত পুরাণের তৃতীয় স্কন্দে উল্লিখিত আছে।
সীতা এবং রাম যখন তাদের বনবাসের নির্বাসনের সময় অনুসূয়ার আশ্রমে গিয়েছিলেন, তখন অনসূয়া সীতাকে এমন উপলেপ দিয়েছিলেন যা চিরকাল তার সৌন্দর্য বজায় রাখার জন্য উপযোগী ছিল। অনসূয়া সীতাকে বলেছিলেন, রাজপ্রসাদের সুখ ত্যাগ করে রামের সঙ্গে বনবাসী হয়েই তিনি সঠিক কাজ করেছিলেন।এছাড়াও তিনি আরো বলেছিলেন একজন নারীর তার স্বামীর চেয়ে ভাল বন্ধু আর হতে পারে না যে তাকে সর্বদা রক্ষা করে।
একবার ঋষি নারদ তার স্তোত্র এবং শ্লোকে অনসূয়ার প্রশংসা করেছিলেন। অনসূয়ার প্রশংসা শুনে লক্ষ্মী পার্বতী এবং সরস্বতী অনসূয়ার কাছ থেকে পতিব্রত্য শিখতে চেয়েছিলেন। তিন দেবী তাদের পতিদের অনুরোধ করেছিলেন অনসূয়ার কাছে গিয়ে তার অনুমতি নিয়ে আসতে, যেন তারা মানবী রূপে তার কাছে যেতে পারেন। এরপর ত্রিদেব ঋষির ছদ্মবেশে অনসূয়ার আশ্রমে গেলেন। অনসূয়া যখন তাদের সেবা করতে গেলেন, তখন তার চোখের মাতৃসুলভ ভালবাসা তিন দেবতাকেই ছয় মাস বয়সী শিশুতে পরিণত করল।
অনুসূয়া তাদের মাতৃস্নেহে পালন করতে লাগল। এরপরে অনেক দিন কেটে গেল তিন দেবী ত্রিদেবের ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু তারা ফিরলেন না। তখন দেবীরা অনসূয়ার কুটিরে গিয়ে দেখেন দেবতারা শিশুতে রূপান্তরিত। তখন দেবীরা অনসূয়াকে অনুরোধ করলেন, তাদের পতিদের স্বাভাবিক করে তোলার জন্য। এছাড়াও একটি কথন অনুযায়ী,
ত্রিদেব একত্রে অনুসুয়া দেবীর ত্রিমস্তকধারী পুত্র রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন ।