কৃষ্ণ ও শিবের যুদ্ধ কেন হয়েছিল

ব্রহ্মা বিষ্ণু শিব হলেন ত্রিদেব। ভগবান বিষ্ণু যুগে যুগে বিভিন্ন অবতার রূপে জন্মগ্রহণ করেছেন। বিষ্ণুর এক অবতার তেমনি ভগবান হলেন শ্রীকৃষ্ণ। কিন্তু কোন এক কারণে শ্রীকৃষ্ণ ও শিবের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল।আজ আপনাদের জানাবো কেন হয়েছিল কৃষ্ণ ও শিবের মধ্যে যুদ্ধ। শ্রীকৃষ্ণ-মহাদেবের যুদ্ধ আসলে অসমের এক প্রচলিত কিংবদন্তি৷ এর সঙ্গে অসমের তেজপুর নগরের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। 

একসময় তেজপুরে বাণ নামক এক শিবভক্ত অসুরের  রাজত্ব ছিল। তার কন্যা ছিলেন ঊষা, যার সৌন্দর্য ছিল নজরকাড়া এবং বিশ্ববিখ্যাত।

 ঊষাকে সুরক্ষিত রাখার জন্য বাণ রাজা অগ্নিগড় নামক অগ্নি দ্বারা আবৃত এক দুর্ভেদ্য দুর্গ তৈরি করেন এবং ঊষাকে সেখানে নিরাপদে রাখেন।

ঊষা এক রাতে স্বপ্নে এক সুদর্শন যুবকের দেখা পান এবং তাকে ভালোবেসে ফেলেন৷ ঊষার প্রিয় সখী চিত্রশিল্পী চিত্রলেখা, ঊষার বর্ণনামতে রাজকুমার যুবকের চিত্র অঙ্কন করেন।পরে অনুসন্ধান করে জানা যায় যে, চিত্রলেখা যে চিত্রটি অঙ্কন করেছে সেটি আসলে বাণ রাজার শত্রু দ্বারকার রাজা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নাতি অনিরুদ্ধ এর চিত্র। ধীরে ধীরে চিত্রলেখার মাধ্যমে ঊষা এবং অনিরুদ্ধর মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং  গন্ধর্ব প্রথমে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।এই খবর বাণ রাজার কানে পৌছলে তিনি ক্রোধে অনিরুদ্ধকে বন্দী করে। অনিরুদ্ধকে উদ্ধার করার জন্য শ্রীকৃষ্ণ যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন৷ তখন বাণ রাজা  শিবের শরণাপন্ন হন৷

বাণ রাজাকে সাহায্য করার জন্য তার ইষ্টদেব শিব স্বয়ং বাণ রাজার পক্ষ হয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এই সময় সংঘটিত কৃষ্ণসেনা ও শিবসেনার মধ্যে  অভুতপুর্ব ভয়ংকর যুদ্ধের ফলে ত্রিভুবন ত্রস্তমান হয়ে উঠে। এই যুদ্ধ কৃষ্ণ অর্থাৎ হরি এবং শিব অর্থাৎ হর দুইজনের মধ্যে  সংঘটিত এজন্য এই যুদ্ধের নাম হরি-হর যুদ্ধ। 

অবশেষে যুদ্ধের প্রাবল্যে সৃষ্টির বিনাশ অবশ্যম্ভাবী দেখে জগতের সকল মুনি,ঋষি ও দেবতা উপাসনার মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণ এবং মহাদেবকে তুষ্ট যুদ্ধের সমাপ্তি হয় এবং শান্ত করলে।বাণ রাজা নিজের ভুল উপলদ্ধি করতে পেরে অনিরুদ্ধকে মুক্তি দেয়।হরি-হর যুদ্ধ নামে লোকপ্রবাদ অনুযায়ী বিখ্যাত বয়ে যায়দুই প্রতাপী দেবতার রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে রক্তের বন্যা।এই স্থান তেজপুর  শোণিতপুর ও কালক্রমে নামে পরিচিত হয়ে উঠে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *