ভগবান রাম, সীতা, ও লক্ষণ কীভাবে মারা গিয়েছিলেন?

সীতা

রাবণকে পরাজিত করার পরে রাম সীতা ও লক্ষ্মণকে নিয়ে অযোধ্যা ফিরে আসেন। অযোধ্যা পৌঁছানোর পরে সীতা সম্পর্কে বেশ কয়েকটি গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল যে তিনি ১২ মাসেরও বেশি সময় ধরে লঙ্কায় ছিলেন, কীভাবে তিনি পবিত্র  হতে পারেন (রাবণের সাথে কোনও সম্পর্ক ছিল না তার কি প্রমান আসে )।  এক ধোপাঁ  ছিল যার স্ত্রী এক রাতে বাড়িতে আসেনি, যখন সে সকালে ফিরে এসেছিল ধোপা  বলেছিল যে আমি রাম নই যে যার স্ত্রী ১২ মাসের জন্য দূরে থাকলেও তবুও তিনি তাকে গ্রহণ করেছিলেন।(তবে পদ্ম পুরাণে উল্লেখ করা হয়েছে যে সীতা  ১১ মাস এবং ১৪ দিন লংকায়  ছিলেন।

এই বিষয়টি যখন রামের দরবারে পৌঁছেছিল তখন তিনি ভেবেছিলেন যে সীতাকে মেনে  নেওয়া ও রাজ্যের লোকদের জন্য কষ্টদায়ক হতে পারে। লোকেরা বলাবলি   করছিল সীতার পবিত্রতা নিয়ে। সন্দেহ করছিল কারণ সীতা  রাবণের লংকায়  এতটা সময় কাটিয়েছিল। প্রজারা সীতার সতীত্ব নিয়ে যে সন্দেহ করেছিলেন রাম  এই গুজব নিয়এণ করতে পারেনি। প্রজাদের সন্দেহ এড়ানোর জন্য শ্রীরাম সীতাকে অগ্নি পরীক্ষা দিতে বলে। এবং সীতা এত শুদ্ধ ছিল যে, অগ্নি তাকে পোড়ায় নি এবং সমস্ত দেবতারা তাঁর পবিত্রতার পক্ষে কথা বলেসিলেন ।তবে রামের প্রথম অগ্রাধিকার সর্বদা তাঁর প্রজারা, তাঁর প্রজারা  সীতাকে গ্রহণ করতে না পারায়  তিনি তাকে রাজ্য থেকে বিতাড়িত করেছিলেন।

তাই, সীতা  গর্ভবতী অবস্থায় দ্বিতীয়বার  নির্বাসিত হন এবং  ভাল্মিকি মুনির আশ্রমে আশ্রয় নেন .রাম, ন্যায়নিষ্ঠভাবে রাজত্ব অব্যাহত রেখেছিলেন এবং বহু যজ্ঞ করেছিলেন এবং তাদের মধ্যে একটি হলেন অশ্বমেধ যজ্ঞ

অশ্বমেধ যজ্ঞের ঘোড়া লব  ও কুশের হাতে ধরা পড়লে ভগবান রাম . ভরত,শত্রুঘ্ন,হনুমান লক্ষণ এবং বড় বড় যোদ্ধাকে যুদ্ধের জন্য প্রেরণ করেছিলেন কিন্তু তারা পরাজিত হয়ে ফিরে এসেছিলেন। প্রচন্ড ক্রোধ নিয়ে  রাম  ও লব ও কুশের উপর আক্রমণ শুরু করেছিলেন যেখানে সীতা এসে উপস্থিত হয় এবং  তাদের একে অপরের সাথে সম্পর্ক বিষয়ে উভয়কে জানান।এই দুই সন্তান আর কেউই ছিল না তাঁরা ছিল রামের পুত্ররা যারা নির্বাসনের সময় সীতার গর্ভে ছিল। তাঁদেরকে ঋষি ভালমিকি আশ্রমে সীতা পালন করছিল। তারা রামের পুত্র হওয়ায় কেউ তাদের যুদ্ধে পরাজিত করতে পারেনি.যেহেতু লভ এবং কুশ অযোধ্যা থেকে দূরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সন্দেহগুলি আবার উত্থাপিত হবে। আর এই জন্যই রাম ভেবেছিলেন দ্বিতীয়বার  প্রজারা সীতার সতীত্বকে সন্দেহ করতে পারে এবং এই কারণেই সীতাকে আবার অগ্নি পরীক্ষা দিতে বলেছিলেন।কিন্তু সীতা তখন রামের প্রতি অত্যন্ত দুঃখিত হয়েছিলেনএটা ভেবে যে তাঁর সতীত্বের আরেকটি পরীক্ষা দিতে হবে,দুঃখে কষ্টে তিনি মাতা বসুমতিকে আহবান করেছিলেন যেন তাঁর নিকট একটু আশ্রয় দেন।এভাবে মাতা বসুমতি তাকে মাটির মধ্যে নিয়ে যান ।

মাতা বসুমতি নিজের উপর কোটি কোটি মানুষের ওজন বহন করে  নীরবে ভুগতে থাকেন –  ঠিক একই দুর্ভাগ্য সীতাকেও  সারা জীবন সহ্য করতে হয়েছিল।

লক্ষণ

সীতাকে  হারানোর পর রাম খুবই ভেঙে পড়েছিলেন।

রাম বুঝতে পেরেছিলেন যে পৃথিবীতে তাঁর কর্তব্য শেষ হয়ে গেছে এবং তাঁকে ভগবান বিষ্ণুর আবাস, বৈকুণ্ঠে ফিরে যেতে হবে। তবে রাম জানতেন যে রামের ভক্ত হনুমান এই ঘটনা ঘটতে দেবে না কারণ তিনি মৃত্যুর দেবতা যমকে রামের সাথে দেখা করতে দেবেন না.রাম জানতেন যে হনুমান বিভ্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত তিনি যমের সাথে দেখা করতে পারবেন না। সে তার আংটিটি ‘পাতাল’ (আন্ডারওয়ার্ল্ড) এর দিকে ফেলে দেয় এবং হনুমানকে সেটি এনে দিতে বলে। হনুমান চলে যাওয়ার পর, রাম যমকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, কিন্তু যম একটি শর্ত রেখেছিলেন যে কেউ যদি তাদের কথোপকথনে বাধা দেয়, রামকে সেই ব্যক্তিকে হত্যা করতে হবে। এতে একমত হয়ে রাম লক্ষ্মণকে গেটের পাহারায় রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে কেউ  প্রবেশ না করে এবং যমের সাথে তাঁর কথোপকথনে হস্তক্ষেপ না করে।এই সময়ে,  ক্রোধের জন্য পরিচিত ঋষি দুর্বাসা রামের সাথে দেখা করতে আসেন কিন্তু লক্ষ্মণ তাকে থামিয়ে দিয়েছিলেন। ক্ষুব্ধ হয়ে দুর্বাসা হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন,যে রামের সাথে দেখা করতে না দিলে তিনি অযোধ্যাকে অভিশাপ দেবেন। লক্ষ্মণ রাম ও যমের আলাপ বিঘিগ্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যাতে রামকে ঋষি হত্যা করতে হবে এমন পরিস্থিতিতে পরতে না দেয় ।তখন লক্ষ্মণ জম ও রামের আলোচনায় বাধা প্রদান করেন , এবং কথা অনুযায়ী লক্ষণ নিজেই  তার ভাইয়ের প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য সরায়ু নদীতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন।

লক্ষ্মণ  শেষনাগের অবতার, যার উপর ভগবান বিষ্ণু বিশ্রামে থাকেন, লক্ষ্মণের পক্ষে রামের আগে মারা যাওয়া অপরিহার্য ছিল যাতে রাম যখন নিজের জীবন ত্যাগ করে  বিষ্ণুরূপে বৈকুণ্ঠে ফিরে যাবেন, তাঁর আসন যাতে এতিমধ্যেই প্রস্তুত থাকে।

রাম

‘পদ্মা পুরাণে’ পাওয়া যায় সীতা ও লক্ষ্মণের পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার পরে ভগবান রাম লভ ও কুশকে রাজ্য দান করে  সরায়ু নদীর দিকে যান।রাম যখন সরায়ু নদীতে প্রবেশ করলেন এবং গভীরতায় চলতে থাকলেন, তখন তিনি তাঁর প্রেমময় স্ত্রী এবং প্রিয় ভাইয়ের সাথে এক হওয়ার আশা করেছিলেন। শেষবারের মতো তিনি উচ্চারণ করলেন, “ওম নমঃ শিবাহ”। এরপর তার দেহ খুঁজে পাওয়া যায় নি।এই ভাবে তিনি বিষ্ণু রূপে বৈকুণ্ঠে গমন করেন এবং এই ভাবে তাঁর অবতার শেষ হয়। অবতারগুলি সাধারণত পৌরাণিক প্রাণীগুলির হাতে শেষ হত।ভগবান রাম যেহেতু আদর্শ জীবনযাত্রার চিত্র তুলে ধরার জন্য এসে ছিলেন এবং তিনি ‘পুরুষোত্তম’ নাম অর্জন করেছিলেন তাই তিনি জনগণকে দেখাতে চেয়েছিলেন যে মৃত্যু মানব জীবনের চূড়ান্ত বাস্তবতা এবং তাকে স্বেচ্ছায় গ্রহণ করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *