রামায়ণ থেকে আমরা কী কী শিক্ষা পায়

১.সত্যের জয়

২.প্রত্যেকের সাথে সমান আচরণ করা

৩. দায়িত্বের প্রতি গভীর প্রতিশ্রুতিবদ্ধ 

৪.ধার্মিকতার পথ বেছে নেওয়া

৫.চকচক করলেই সোনা হয় না

৬.কাউকে ছোট মনে করা উচিত নয়

৭. পিতা-মাতার প্রতি ভালবাসা এবং শ্রদ্ধা

৮.অসৎ সঙ্গ পরিত্যাগ করা

৯. সম্পর্ক অর্থের চেয়ে মূল্যবান

১০. প্রতিশোধ অপেক্ষা ক্ষমা মহৎ

আমরা প্রায়শই রামায়ণ পাঠ  শুনে থাকি। এই  মহাকাব্যটি আমাদের এমন অনেকগুলি শিক্ষা দিয়েছে যা আমাদের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

আপনাদের আজ জানাবো আমরা রামায়ণ থেকে আমরা কী কী শিক্ষা পায়?

১.সত্যের জয়

রামায়ণের শিক্ষাই মূল হল মিথ্যা যতই শক্তিশালী হোক, সত্য দ্বারা সবর্দা পরাজিত হবে।সবসময়ই হয় সত্যের জয় । 

একজন ব্যক্তির সর্বদা একটি ভাল মূল্যবোধ এবং মহৎ হৃদয়  থাকা উচিত। সে যা দ্বারা  জয় করতে হবে সক্ষম  সমস্ত কিছু ।   

এইভাবেই মহৎ হৃদয়ের রাম  রাবণকে পরাজিত করেছিলেন।

২.প্রত্যেকের সাথে সমান আচরণ করা

 রাম ভালো সমান সবার সাথে আচরণ করতেন এবং এভাবেই তিনি শ্রদ্ধা অর্জন  এবং সকলের ভালবাসা করেছিলেন। যেকোন বয়স্ক  ব্যক্তি বা প্রবীণ হোক কিংবা দরিদ্র বা ধনী হোক। আমাদের উচিত সমান আচরণ করা সবার সাথে। 

এক ঋষিকন্যা একবার তাকে কিছু উপহার দিয়েছিলেন ফল,তখন তিনি দ্বিতীয় কোন চিন্তা না করেই খেয়েছিলেন সেগুলি ।তিনি সর্বদা কেননা মানুষের প্রতি বিনয়ী  ও সদয়  ছিলেন।

ভগবান রামের এই গুণটি আমাদের অন্তর্নিহিত সবার মধ্যেই  থাকা উচিত।সকলের থেকে ভালবাসা এবং শ্রদ্ধা পেতে হলে প্রত্যেকের সাথে সমান আচরণ করা এবং সদয়  ও বিনয়ী হওয়া উচিত।  

৩. দায়িত্বের প্রতি গভীর প্রতিশ্রুতিবদ্ধ

মাতা সীতার স্বামী হওয়া ছাড়াও রামও ছিলেন অযোধ্যার রাজা। আর রাজার কর্তব্য হল তার প্রজাগুলিকে সুখী রাখা। যখন প্রজারা সীতার পবিত্রতা নিয়ে প্রশ্ন করেছিল তখন তিনি সীতাকে ত্যাগ করেছিলেন। যদিও স্বামী হিসাবে স্ত্রীর প্রতি তার কর্তব্য ছিলো। তবে একজন রাজা হিসাবে তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়গুলির আগে তাঁর প্রজাদের ইচ্ছার কথা ভাবতে হয়েছিল।

ব্যক্তিগত আমাদেরও  ইচ্ছা অপেক্ষা দায়িত্বের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।      

৪.ন্যায়ের পথ বেছে নেওয়া

রাবণের ছোট ভাই বিভীষণ রামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তাঁর ভাইবোনকে সমর্থন না করে তিনি রামের পক্ষ বেছে নিয়েছিলেন।কেননা  তিনি জানতেন যে তার ভাই অন্যায় করেছে এবং এজন্যই তিনি ন্যায়ের পথ বেছে নিয়েছিলেন।

জীবনেও আমাদের অনেক সমস্যা আসতে পারে কিন্তু আমাদের উচিত সর্বদা ন্যায়ের পথ বেছে নেওয়া। 

৫.চকচক করলেই সোনা হয় না

একটি হরিণের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সীতা রামকে সেই হরিণ নিয়ে আসতে বলেছিল। কিন্তু সেই হরিণটি ছিল আসলে রাবনের সহযোগী মারিচ পশুর ছদ্মবেশে। রাম এই হরিণকে আনতে যাওয়ার পর  সীতাকে হরণ করে নিয়ে যায় রাবণ।

কোন জিনিসেরই বাইরের সৌন্দর্য দেখেই মূল্যায়ন করা আমাদের উচিত নয় ।       

৬.কাউকে ছোট মনে করা উচিত নয়

পরাক্রমশালী  রাম “রাম সেতু”  তৈরির জন্য বানর সেনাদের সাহায্য নিয়েছিলেন যাতে তিনি সীতা মুক্ত করতে লঙ্কায় পৌঁছাতে পারেন।এই বানর সেনারা কেবল তাকে সেতু তৈরি করতেই সহায়তা করে নি বরং রাবণের বিরুদ্ধে যুদ্ধেও অংশ নিয়েছিল।

আমাদের ও কাউকে ছোট মনে করা উচিত নয়।

আমরা যতই ক্ষমতাধর হই না কেন কিছু দুর্বলদের সাহায্য নেওয়া লাগতে পারে কাজে।     

৭. পিতা-মাতার প্রতি ভালবাসা এবং শ্রদ্ধা

মাতা পিতার প্রতি কর্তব্যবদ্ধ রাম ছিলেন। বাবার দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য  ১৪ বছরের জন্য বনবাসে গিয়েছিলেন রাম।পিতৃসত্য পালনের জন্য তার এই আত্মত্যাগ তার বাবা-মায়ের প্রতি নিষ্ঠা এবং গভীর  ভালবাসা  প্রকাশ করে। 

দশরথও তার সন্তানকে এত গভীর ভালবাসতেন যে রাম যখন বনের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন, তখন দশরথ ১৪ বছরের জন্য ছেলের কাছ থেকে দূরে থাকার চিন্তাভাবনা সহ্য করতে পারেন নি এবং শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন।

 আমাদের সকলেরই উচিত পিতামাতাকে সম্মান করা।   

৮.অসৎ সঙ্গ পরিত্যাগ করা

বলা হয়ে থাকে সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস আর অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।   

দশরথের তৃতীয় স্ত্রী রানী কৈকেয় তাঁর নিজের ছেলের চেয়ে রামকে বেশি ভালোবাসতেন কিন্তু তাঁর দাসী মন্থরা তাকে নেতিবাচক পরামর্শ দিয়ে তার চিন্তাভাবনাকেও  নেতিবাচক করে দিয়েছিল। 

ফলস্বরূপ যার  কৈকেয়ী রামের চৌদ্দ বছরের নির্বাসনের জন্য বলেছিলেন।

একজন নেতিবাচক ব্যক্তি আপনার ভিতরে থাকা সমস্ত ভাল গুণ নষ্ট  করতে পারে, এজন্য আমাদের সর্বদা অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করা উচিত৷   

৯. সম্পর্ক অর্থের চেয়ে মূল্যবান

  প্রতিটি ক্রোধ বা বিশ্বাসঘাতকতার ,সম্পর্ক লোভ চেয়ে উপরে হওয়া উচিত।

যখন রাম চৌদ্দ বছরের জন্য বনবাসে গিয়েছিলেন তখন লক্ষ্মণ তাঁর সাথে এসেছিলেন।  ভরত, যাকে রাজ্যভার দেওয়া হয়েছিল, তিনি কখনও নিজেকে রাজা হিসাবে বিবেচনা করেননি, পরিবর্তে তিনি  রামের  ফিরে আসার আগ পর্যন্ত রামের পাদুকা সিংহাসনে রেখে নিজে নাম মাত্র রাজা হিসেবে রাজ্য পরিচালনা করেছিলেন।   

তাদের একে অপরের প্রতি ভালবাসা অর্থ বা সম্পত্তির চেয়ে ওবেশি ছিল।  আমরাদের ও উচিত  সম্পর্ককে অন্য যেকোন কিছুর চেয়েও বেশি মূল্যায়ন করা।  

১০. প্রতিশোধ অপেক্ষা ক্ষমা মহৎ

রাবণ যখন জানতে পারে লক্ষ্মণ তাঁর বোনকে  অপমান করেছেন, তখন তিনি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য  সীতা কে অপহরণ করেছিলেন।  তিনি তার নিজের ক্ষোভের জন্য শেষ পর্যন্ত তিনি মৃত্যুর পরোয়ায় স্বাক্ষর করেন।

যদিও  রাবণ ছিলেন জ্ঞানবান কিন্তু তাঁর প্রতিশোধের অনুভূতি  জীবনকে দিয়েছিল ধ্বংস করে । 

 আমাদের সর্বদা ক্ষমাশীল প্রকৃতি বজায় রাখা উচিত কারণ  প্রতিশোধ গ্রহণের ফলে কোন লাভ হয় না।

 আমাদের জীবনে এটি পতন নিয়ে আসে।ক্ষমার মনোভাব বজায় রাখলে শান্তি এবং সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *