সীতা দেবীর অভিশাপ

হিন্দু পুরাণ মহাকাব্যে দেবী সীতা চির অভাগিণী হিসেবে পরিচিত। ত্যাগের এক অনন্য প্রতীক সীতা দেবী। 

 দেবী সীতা ত্যাগের প্রতীক , রাম, ও লক্ষ্মণ বনবাসে গিয়েছিলেন এবং এখানেই তিনি রাগান্বিত হয়ে  ৫ জনকে অভিশাপ দিয়েছিলেন। সেই অভিশাপ এখনো ফলে যাচ্ছে। যাদের অভিশাপ দিয়েছিলো তারা এখনো কষ্ট ভোগ করে চলেছে। মাতা সীতা কেনই বা এত রাগান্বিত হয়ে কাকে  কি কি অভিশাপ দিয়েছিলেনতাহলে আসুন জেনে নেই? 

রাম , লক্ষণ ও সীতা বনবাসে থাকাকালীন সংবাদ পেয়েছিলেন যে রাজা দশরথ  প্রয়াত হয়েছেন। তখন শ্রীরাম খুব ভেঙ্গে পড়লেন। যতই কষ্ট হোক না কেন পুত্রের কর্তব্য পিতার শ্রাদ্ধকার্য সম্পন্ন করা, এজন্য শ্রাদ্ধকার্যের উদ্দেশ্যে রাম চন্দ্র সবাইকে নিয়ে গয়াতে গেলেন। শ্রাদ্ধকার্যের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রীর জন্য তিনি লক্ষণকে নিকটবর্তী গ্রামে পাঠালেন। কিন্তু যখন অনেক সময় অপেক্ষা করার পরও লক্ষণ ফিরছিলো না তখন মাতা সীতাকে ফলগু নদীর তীরে রেখে শ্রীরাম ও লক্ষণকে খুঁজতে গেলেন। 

যখন কেউই ফিরছিলেন না তখন মাতা সীতা ভীত হয়ে পড়লেন অনেকসময় অতিবাহিত হওয়ার পর। আবার এদিকে শ্রাদ্ধের সময় যে পার হয়ে যাচ্ছে।বয়ে বেলাও যায় | |শ্রাদ্ধ সম্পূর্ণ দ্বিপ্রহরের আগে  না হোক‚ কিন্তু শুরু তো হতেই হবে। দেবী সীতা স্থির করলেন তিনি একাই শ্রাদ্ধকার্যের সূত্রপাত করবেন। তিনি হাতের কাছে সামগ্রী উপস্থিত যা ছিল তাই দিয়েই কার্য সমাধা করবেন বলে নিশ্চিত করলেন।

ফল্গু নদীতে ক্রিয়াকর্ম শুরুর আগে দেবূ সীতা স্নান করলেন । তিনি স্বর্গত দশরথকে মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে উৎসর্গ করলেন ।  ।দেবী সীতা প্রার্থনারত ছিলেন চোখ বন্ধ করে ।অজানা এক কণ্ঠস্বরে তার ঘোর ভঙ্গ হল । অজানা এক কণ্ঠস্বরে তার ঘোর ভঙ্গ হল । তিনি গৃহীত হয়েছে শুনলেন তাঁর নিবেদন ।দুটি হাত এসে  আকাশ থেকে চোখ খুলে দেবী সীতা দেখলেন তাঁর দান গ্রহণ করছেন । দেবী  প্রশ্ন করলেন‚ কে তিনি  ? তখন শুনলেন‚ ওই হাত রাজা দশরথের।  তিনি পুত্রবধূর দান গ্রহণ করতে এসেছেন।  আপ্লুত সীতা দেবী দ্বিধাগ্রশ্ত স্বরে বললেন  তিনি কর্তব্য সমাধা করেছেন তা যদি রামচন্দ্র ও লক্ষ্মণ বিশ্বাস না করেন  ?  তখন দশরথের কণ্ঠস্বর উত্তর দিল‚ অবশ্যই বিশ্বাস করবে। কারণ সীতা দেবীর কাজের পাঁচজন সাক্ষী আছেন। 

তাঁরা হলেন অক্ষয়বট বা বটগাছ‚তুলসি গাছ  ‚এক ব্রাহ্মণ এবং ফল্গু নদী‚ গরু। 

তবে তার সংশয় সত্য হল।  রামচন্দ্র ও লক্ষ্মণ ফিরে এসে তাঁর কথা বিশ্বাস করলেন না।  তাঁদের প্রত্যয়ই হল না যে  দেবী সীতার দান গ্রহণ করেছেন স্বর্গত রাজা দশরথ। তখন নিরূপায় সীতা গেলেন সাক্ষীদের কাছে। কিন্তু অক্ষয়বট ছাড়া তখন আর কেউই স্বীকার করল না সীতার কথা। অপমান লজ্জা ও রাগে কাঁপতে লাগলেন তিনি। 

শ্রীরাম ও লক্ষ্মণ অবিশ্বাসী বসলেন শ্রাদ্ধকাজে। তখন এক স্বর স্বর্গ থেকে বর্ষিত হল।তাঁদের স্বর্গত ঊর্ধ্বতন পূর্ব পুরুষরা জানালেন সম্পন্ন সীতা যথাযথভাবে  করেছেন শ্রাদ্ধ। এজন্য আর নিষ্প্রয়োজন দ্বিতীয়বার । 

শ্রীরাম ও লক্ষ্মণ নিজেদের ভুলে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হলেন । 

দেবী সীতা  অভিশাপ দিলেন  এ বার ক্রুদ্ধ হয়ে মিথ্যাচারী চার সাক্ষীকে। তিনি বললেন‚ এ বার থেকে ফল্গু গয়ায় নদী হয়ে যাবে অন্তর্বাহী ।বালির নিচ দিয়ে বইবে তবে । গরুর মুখ অপবিত্র বলে মান্য হবে। তাঁর পুজো শুরু হবে তবে পিছন দিক থেকে‚ সামনের দিক থেকে নয়। 

যে কোন তুলসি গাছ থাকবে না গয়ায় ।কখনো কোনদিনই তুষ্ট হবে না ব্রাহ্মণ বর্ণের মানুষ । তাদের লোভের নিবৃত্তি ঘটবে না,

আরও চাই সবসময় মনে হবে ।তবে একমাত্র বটগাছকে আশীর্বাদ করে  বললেন সত্যবাদী সাক্ষী বটগাছ এবার থেকে হবে অক্ষয়বট‚ চিরশাশ্বত। 

কিন্তু শিবপুরাণে সাক্ষীদের নাম ভিন্ন। সেখানে দেবী সীতাকে মিথ্যাচার করা সাক্ষীরা হল ফল্গু‚ কেতকী ফুল‚ অগ্নি‚ গরু ও ব্রাহ্মণ। তিনি কেতকী ফুলকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে কোনদিনও তাকে শিবপুজোয় ব্যবহার করা হবে না। সবকিছুকে গ্রাস করবে সে অর্থাৎ অগ্নি হবে হূতাশন।  অভিশাপই এই প্রতিটি জাজ্বল্যমান তা আর বলার অপেক্ষা রাখে নাযে সত্যি। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *