শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা কে ছিল অর্জুন নাকি কর্ণ

মহাভারত একটি প্রাচীন মহাকাব্য। বেদব্যাস এর রচয়িতা। মহাভারতে অনেক মহান যোদ্ধাদের  বর্ণনা পাওয়া যায়. তাদের মধ্যে  অর্জুন এবং কর্ণ অন্যতম।

অর্জুন ও কর্ণ উভয়ই কুন্তী পুত্র ছিলেন। কিন্তু প্রথমে তারা দুজনেই এই সত্য জানতেন না.অর্জুন তৃতীয় পান্ডব ও কর্ণ সূত পুত্র হিসাবে পরিচিত ছিলেন।

শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা কে ছিল অর্জুন নাকি কর্ণ

শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা কে ছিল অর্জুন নাকি কর্ণ মহাভারতের কাহিনী অনুযায়ী স্বয়ং বিষ্ণুর যুগল অবতার হচ্ছেন নর ও নারায়ণ ঋষিদ্বয়.  এবং সেই নর-নারায়ণের নারায়ণ-ই হচ্ছেন স্বয়ং কৃষ্ণ এবং নর হচ্ছেন স্বয়ং অর্জুন. তার অর্থ হল কৃষ্ণের মত অর্জুনও স্বয়ং বিষ্ণুর অংশ।মহাভারতে যখনই কোন চরিত্রের বীরত্বকে বর্ণনা করা হয়েছে, তখন সেই চরিত্রটিই মহাভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ বীর চরিত্র  বলে মনে হয়েছে। যখন কর্ণ চরিত্রটির বীরত্বের বর্ণনা দেখা যায়, তখন মনে হয় যেন কর্ণই মহাভারতের শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা। আবার যখন অর্জুনের বর্ণনা পাওয়া যায় ,তখন মনে হয় অর্জুনই শ্রেষ্ঠ।

এমন অনেক  যোদ্ধার নিকট কর্ণ পরাজিত হয়েছেন যে, মনে হবে কর্ণ খুবই সাধারণ মানের একজন যোদ্ধা।আবার এমন কিছু যোদ্ধাকে কর্ণ পরাজিত করেছেন যাদেরকে স্বয়ং অর্জুনও পরাজিত করতে পারেন নি।

বিরাটের যুদ্ধে, বিরাট রাজাকে আক্রমণকারী সমস্ত কৌরবদের বিরুদ্ধে অর্জুন একা যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন। তিনি এককভাবে ভীষ্ম, কর্ণ, দুর্যোধন, দ্রোণ এবং আরও অনেককে পরাজিত করেছিলেন এবং বিরাট রাজাকে বাঁচিয়েছিলেন। কর্ণ তখন অর্জুন এর কাছে পরাজিত হয়।কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময় অর্জুনের  এক বাণে কর্ণের রথ দশ পা পিছিয়ে গিয়েছিল, আর সেখানে কর্ণের এক বাণে অর্জুনের  রথ মাত্র দুই পা পিছনে গিয়েছিল।তখন শ্রীকৃষ্ণ অর্জুন কে বলেছিলেন, তোমার রথের ওপর যেখানে স্বয়ং আমি (অর্থাৎ নারায়ণ )বসে আছি ত্রিলোকের ভার নিয়ে, সেই রথকে কি কেউ বিন্দুমাত্রও পিছাতে  পারে?কিন্তু কর্ণের বান অধিক শক্তিশালী ছিল তাই অর্জুনের রথ পিছিয়ে গিয়েছিলো।কিন্তূ অর্জুনের পুত্র অভিমন্যুকে হত্যা করার জন্য যখন কর্ণ অন্য কৌরবদের সাথে জুটি বেঁধেছিলেন তখন কর্ণ তার মহান যোদ্ধা চিত্র বজায় রাখতে ব্যর্থ হন।একজন মহান যোদ্ধা কীভাবে এটি করতে পারেন? তিনি সব হত্যাকারীর সঙ্গে একসাথে অন্যায় যুদ্ধে নির্মমভাবে সাহসী শিশু অভিমন্যুকে হত্যা করেছিলেন।

আবার কর্ণের মানসিকতা ছিল আবেগময়।শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা কে ছিল অর্জুন নাকি কর্ণ কর্ণ আবেগ দ্বারা পরিচালিত হয়েছিলেন বলে, সবসময়  সত্য ও ধর্মের সাথে তিনি দাঁড়ান নি। তিনি যা কিছু করেন তার জন্য অন্ধভাবে তাঁর মিত্র দুর্যোধনকে অনুসরণ করেছিলেন।তিনি জানতেন যে দুর্যোধন ভুল ছিল কিন্তু তিনি তখনও কুরুক্ষেত্রে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন কারণ দুর্যোধন তাকে অঙ্গরাজ্যের রাজা করেছিলেন. কর্ণ সভায় দ্রৌপদিকে অপমান করেছিলেন।

শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা কে ছিল অর্জুন নাকি কর্ণ ।আবার অর্জুন এর কাছে আবেগ অপেক্ষা দায়িত্ব ও কর্তব্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা কে ছিল অর্জুন নাকি কর্ণ ।

দ্রৌপদীকে যখন পঞ্চপান্ডব কে বিবাহ করেছিলেন, তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে দ্রৌপদী যখন তাদের একজনের সাথে সময়  কাটাবেন  তখন অন্য কোনও ভাই কক্ষে প্রবেশ করবেন না। প্রবেশ করলে ১২ বছরের নির্বাসন গ্রহণ করতে হবে।

কিন্তু, একবার যুধিষ্ঠির দ্রৌপদীর সাথে একা  ছিলেন এবং অর্জুনকে গাভীদের সাহায্য করার জন্য ওই একই কক্ষে অস্ত্র নিতে  প্রবেশ করতে হয়েছিল।শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা কে ছিল অর্জুন নাকি কর্ণ যার ফলস্বরূপ অর্জুনকে ১২ বছরের নির্বাসন গ্রহণ করতে হয়েছিল।সুতরাং, একটি ন্যায়সঙ্গত দায়িত্ব অর্জুনের কাছে আবেগের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার  বড় কারণ ছিল।কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুন ও কর্ণের ভীষণ যুদ্ধ হয় । দুইজন সমান যোদ্ধা হওয়ার কারণে কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছিলেন না। শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা কে ছিল অর্জুন নাকি কর্ণ হঠাৎ কর্ণের রথের চাকা মাটিতে বসে যায়। একদিন কর্ণের তীরে ভুলবশত এক ব্রাহ্মণের গরু  মারা যায়। তখন সেই ব্রাহ্মণ কর্ণকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে শেষ যুদ্ধের সময় কর্ণের রথের চাকা মাটিতে বসে যাবে। এদিকে পরশুরামের সাথে মিথ্যাচারের ফলস্বরূপ তার (কর্ণের) সাথে যা ঘটবে তার বর্ণনা অনুসারে ,কর্ণ ব্রহ্মাস্ত্রের মন্ত্র ভুলে গেলেন। তখন অর্জুন অঞ্জলীক বাণ দ্বারা কর্ণের হত্যা করলেন।কর্ণ ও অর্জুন উভয়েরই নিজের মতো করে লড়াই করে গেছেন।কর্ণ শুধু একজন যোদ্ধাই নয় বরং দানবীর ও ছিলেন।মহাভারতে যদি সত্যিকারের দাতা হিসেবে কেউ পরিচিত ছিলেন, তা হলেন কর্ণ। তিনি নিজের মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও কবচ-কুণ্ডল পর্যন্ত দান করেছিলেন।শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা কে ছিল অর্জুন নাকি কর্ণ অনেক গুণাবলী থাকা সত্ত্বেও কর্ণ শ্রেষ্ঠ না অর্জুনই শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা. কারণ  কর্ণ  ধার্মিক থাকলেও সবসময় ধর্ম ও সত্যের পথ অনুসরণ করেননি।যদিও সূত পুত্র হওয়ার জন্য আজীবন তাকে সংঘর্ষ করতে হয়েছে।কর্ণের জীবন দেখিয়ে দেয়‚ নিয়তিকে কেউ অতিক্রম করতে পারে না।যা ঘটবার‚ তা ঘটবেই | দ্বন্দ্ব হোক বা যুদ্ধ, অগ্রসর হতে হবে ধর্মের পথে |  তবে সবকিছুর পরেও অনেক প্রশ্ন উত্তরহীন থেকে যায়।কর্ণ যদি তার আসল পরিচয় আগেই জানতে পারতো তবে হয়তো চিত্রটা পাল্টে যেতে পারতো ।আপনাদের মতে কে শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা অর্জুন নাকি কর্ণ ?কমেন্ট এর মাধ্যমে আমাদের জানাতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *