ভীমকুণ্ড একটা ঐতিহাসিক এবং মহাকাব্যিক স্থান। মহাভারতেও এই জলাশয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। অনেক রহস্যময় কাহিনিও রয়েছে এই ভীমকুণ্ডকে ঘিরে। আজ আপনাদের জানাবো সেই রহস্যময় কাহিনি সম্পর্কে।
মধ্যপ্রদেশের ছতরপুর জেলায় এই প্রাকৃতিক জলাশয় ভীমকুণ্ড অবস্থিত। আবার এটি নীলকুণ্ড নামেও পরিচিত। এই কুণ্ডের গভীরতা অসীম বলে বিশ্বাস করা হয়। জলধারাটির চমকপ্রদ নীল জল ও লাল পাথরের দেওয়াল মিলে সুন্দর এক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এই কুণ্ডটি একটি ভূগর্ভস্থ গুহার মধ্যে ও গুহার মুখ থেকে প্রায় ৩০ মিটার ভেতরে অবস্থিত। প্রবেশদ্বারের বামে একটি ছোট শিবলিঙ্গ আছে। ভীমকুণ্ড দেখতে একটা সাধারণ জলাশয়ের মতোই মনে হয়। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এই ভীমকুণ্ড কোনো সাধারণ জলাশয় নয়। এই জলাশয় নাকি এশিয়া মহাদেশে আসন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সঙ্কেত দেয়। তারা আরও দাবি করে যে, আসন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আঁচ পেলেই ভীমকুণ্ডের শান্ত জলে একটা আলোড়ন শুরু হয়ে যায়। ২০০৪ সালের সুনামির সময় ভীমকুণ্ডের এই ‘অদ্ভুত ক্ষমতা’ চোখে পড়ে। সেই সময় শান্ত ভীমকুণ্ডের জল প্রায় ৩০ মিটার পর্যন্ত বেড়ে যায়।
ভীমকুণ্ডের আরও একটা বিশেষত্ব আছে চোখে পড়ে। এটির সঠিক গভীরতা এখন পর্যন্ত কেউই মাপতে সক্ষম হননি। স্থানীয় প্রশাসন তো আছেই এমনকি বিদেশি বৈজ্ঞানিকদের একটি দলও ব্যর্থ হয় তাদের অভিযানে। আরও একটি আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, ভীমকুণ্ডের ২৫০ ফুট গভীরে যাওয়ার পরই তীব্র স্রোতের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়, কিন্তু এই স্রোত এর উৎপত্তি কোথায়, তার রহস্য এখনও ভেদ করা সম্ভব হয়নি। ভীমকুণ্ডের জলস্তর কমানোর জন্য ১৯৭৭ সালে ছতরপুর জেলা প্রশাসন তিনটে পাম্প লাগিয়েছিল। কিন্তু দেখা যায় যে, পাম্প দিয়ে জল তোলার পরেও এক ইঞ্চিও জলস্তর কমেনি।
ভীমকুণ্ডের জলে সূর্যের আলো পড়লেই জলের রং নীল দেখায় এবং ঝকঝকও করে। এই কারণেই ভীমকুণ্ডের অপর এক নাম নীলকুণ্ড। পুরাণে উল্লিখিত নীলকুণ্ডের সঙ্গেও এর মিল পাওয়া যায়।
মহাভারতের সময়ের সঙ্গে এই জলাশয়ের নাম জড়িয়ে আছে। ১২ বছর বনবাসের সময় পাণ্ডবরা এক বছর এর জন্য অজ্ঞাতবাসে ছিলেন। একবার এই পথ দিয়ে তারা যাচ্ছিলেন। তখনও এখানে কোনো কুণ্ড ছিল না। ওখান দিয়ে যাওয়ার সময় দ্রৌপদীর খুব তেষ্টা পায়। তবে গভীর অরণ্যে তেষ্টা মেটানোর জন্য কোনও জলাশয়ই খুঁজে পাননি পাণ্ডবরা। তখন উপায় না দেখে ভীম তাঁর গদা দিয়ে মাটিতে জোরে আঘাত করেন। তাঁর গদার শক্তিশালী আঘাতে তখনই মাটি ভেদ করে জল বেরিয়ে আসে। আর তারপর থেকেই এই কুণ্ডের নাম হয় ভীমকুণ্ড।ভীমকুণ্ডের জল খুব পবিত্র বলে মনে করা হয়।মকর সংক্রান্তির দিন ভীমকুণ্ডে স্নান করা অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করা হয়।